Header Ads Widget

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)

 



হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.): হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) বাংলা ১২ ফাল্গুন ১৩১৬ সাল, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯১০ খিষ্টাব্দ- রোজ শুক্রবার, ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার অন্তভুক্ত দশহাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সুবেহ সাদেকের প্রথম লগ্নে তাঁর নানা হযরত মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ‍মুন্সী (রহ.)-এর বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন ।

তাঁর পিতার নাম সৈয়দ হযরত মোহাম্মদ কোরবান আলী খান (রহ.) যিনি হযরত রাসুল পাক (সঃ) এর ২০তম পুরুষ ছিলেন এবং স্যায়েদেনা হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর বংশধর ছিলেন। মাতা হযরত খাদিজা খাতুন (রহ.)। ১৯শে ফাল্গুন বৃহস্পতিবার ৪টি খাসী কোরবানীর মাধ্যমে আকীকা করে নাম রাখা হয়- আবুল ফজল সুলতান আহমদ।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) এর বয়স যখন দুই কিংবা আড়াই বছর, এক দুই পা করে হাঁটতে পারেন। তখন একদিন তাঁর মা হঠাৎ করে তাঁকে বললেন-’তোমার আব্বাকে ভাত খাবার জন্য ডেকে আনো।’ তাঁর মা কিন্তু খেয়াল করেন নাই যে  তাঁর শিশুপুত্র তাঁর আদেশ পালনের জন্য ‘আব্বা আব্বা ‘বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।

ইতিমধ্যে আধ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর যখন সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর কথা মনে পড়ে তখন তাঁর মা শিশুপুত্র কে খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু ততক্ষনে তিনি হাঁটতে হাঁটতে বাড়ীর পাশে অবস্থিত পদ্মা নদীর তীরে চলে আসেন তাঁর বাবাকে ডাকতে। কিন্তু নদীর পাড়ে তাঁর বাবা না থাকায় তিনি ওখানেই অপেক্ষা করতে থাকেন।

নদীতে তখন এক জেলে মাছ ধরছিল। তার কোন সন্তান ছিল না। তাই নদীর তীরে একাকী একটি শিশুবাচ্চাকে কাঁদতে দেখে তিনি তাঁকে নিয়ে তার বাড়ীতে যান এবং তার স্ত্রীর কোলে তুলে দেন।

জেলের স্ত্রী শিশুটিকে গোসল করিয়ে এক পেয়ালা দুধ এনে খেতে দেন। কিন্তু শিশু তাঁর মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। দুধ খেতে সে চায়না, এমমনকি পেয়ালাও স্পর্শ করতে চায় নাই। অথচ সে ক্ষুধার জ্বালায় কাতর ছিলেন। খুব চেষ্টার পর জেলের স্ত্রী তাঁকে কিছুটা দুধ খাওয়াতে সক্ষম হয়।

এদিকে তাঁর মা বাবা সহ পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের সবাই শিশু পুত্র হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-কে খোঁজা খঁজি শুরু করে দেন । অবশেষে দুই দিন পরে তাঁর চাচা সৈয়দ মোহাম্মদ গুঞ্জর খান (রহ.) লোক মারফত খবর পেয়ে জেলের বাড়ী থেকে শিশুপুত্র কে খুজে পান এবং তাঁর বাড়ীতে ফেরত নিয়ে আসেন।

যে শিশু সন্তান মায়ের কথা পালনের জন্য তাঁর বাবাকে ডেকে আনতে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন এবং দুইদিন পর চাচার সাথে ঘরে ফিরলেন – সে যে সাধারণ কোন শিশু নয় তা তিনি প্রমাণ করলেন।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) বাল্যকাল থেকেই ছিলেন সদালপী, বন্ধুবৎসল এবং মিশুক প্রকৃতির। তিনি সুমিষ্ট স্বরে মানুষের সাথে আলাপ করতে ভালবাসতেন। ফায়েজে পরিপূর্ণ তাঁর যুক্তিপূর্ণ প্রাঞ্জল ভাষণ শ্রোতাদের হৃদয় কেড়ে নিত । ফলে অল্প বয়স থেকেই তিনি মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠেন।

সমবয়সী ছেলেরা তাঁর সামনে কখনো মারামারি করতে পারত না। কোন কারণে তাদের ভিতর মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে তিনি উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে এমন সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি করে দিতেন যে, কারো মনে কোন আক্রোশ থাকত না। খেলার সাথীদেরকে তিনি অনেক সময় উপদেশমুলক নানা বাক্য শোনাতেন। তাঁর বালক বুদি্ধিমত্তার কাছে অনেক প্রবীণকেও হার মানতে হতো।

সত্যবাদীতায় তিনি ছিলেন পুষ্পের মত সুন্দর। জীবনে তিনি কোন দিন মিথ্যার আশ্রয় নেন নাই। মিথ্যাবাদীকে তিনি মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন উদার ও সরল প্রকৃতির। তাই কেউ কিছু বললে তিনি তা অকপটে বিশ্বাস করতেন। অনেক সময় তাঁর সরলতার সুযোগ নিত। তিনি সেটা টের পেয়েও কিছু বলতেন না।গরীব-দুঃখীর দুঃখে তিনিও দুঃখিত হয়ে পড়তেন। অন্যের উপকারের জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করতে বিন্দুমাত্র সংকোচন করতেন নাই।

বাল্যকালে কঠিন বিপদের সময় তিনি সামান্য পরিমাণও বিচলিত হতেন না । তিনি আল্লাহ্পাকের উপর অগাধ ভরসা রাখতেন বলে আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে সসন্মানে সকল বিপদ আপদ মোবাবিলা করার তৌফিক দিতেন।

বাংলা ১৩২৬ সালের আশ্বিন মাস, ১৯১৯ সালে সংঘঠিত মহাপ্রলয়ংকারী ঘুর্নিঝড়ের সময় তিনি তাঁর খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। উক্ত ঝড়ের রাতে তিনি একটি মহাজনী সিন্দুকের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঝড় ক্রমেই বেড়ে চলছে। সবাই ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। তাঁর খালা তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। ঝড়ের সময় বজ্রপাত, তুমুল বর্ষণ এবং বাতাসের বেগ এতটাই বেশী ছিল যে, গাছপালা, ঘরবাড়ী সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতে লাগল। চারদিকে মানুষ চিৎকার শুরু করে দিলো। আশেপাশের মানুষ ছুটাছুটি করে তাঁর খালার বাড়িতে এসে তিনি যে ঘরে ছিলেন সেখানে আশ্রয় নিতে লাগল। তাদের সবার ঘর বাড়ী পড়ে গেছে। তাঁর খালার ঘরটাই পড়তে বাকী আছে। সবাই কান্না করছে কিন্তু দশবছরের বালক গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। হঠাৎ তিনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন- “ আপনারা চুপচাপ আল্লাহকে ডাকেন। ইনশা আল্লাহ্ আমাদের এ ঘরের কোন ক্ষতি হবে না”।

কি এক মহাশক্তি ছিল বালকের আত্মায়। এত বড় বিপদে সবাই যখন দিশেহারা তখন তাঁর মধ্যে তাওয়াক্কুল কত প্রবল। আবাল বৃদ্ধ যখন দিশেহারা, তখন একটি বালক তাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।সবাই জানত শৈশবকাল থেকে তাঁর জবান থেকে যা বের হত তাই বাস্তবে ফলে যেত। তাই সবাই অনেকটা আশ্বস্ত হলো।

ইতিমধ্যে ঘরখানা লোকজনে ভরে গেছে। তিল পরিমান দাড়ানোর জায়গাও ছিল না। ঝড়ের পরের দেখা গেল যে তিনি যে ঘরখানায় ছিলেন সেটা ছাড়া আশেপাশের কারো একটা ঘরও আস্ত ছিল না। সমস্ত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।

এখানেই বুঝা যায় যে, শৈশব থেকেই তিনি এক উচ্চশ্রেনীর মহামানব যার জীবনের প্রতিটি ঘটনার মধ্যে আলৌকিকত্বের স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায়।

বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী । প্রচলিত কুসংস্কার ও মিথ্যার বিরুদ্ধে তেজস্বী ও কঠোর প্রতিবাদ জানাতেন। দেশের জমিদারেরা সে সময় ‍মুসলমানদের উপর নানা রকম অত্যাচার করত। সদরপুর থানার চৌদ্দরশি গ্রামের জমিদার বাবু ও ঢেউখালী গ্রামের দেওয়ানজী বাড়ির লোকেরা খুবই প্রতাপশালী ছিল। তাদের বাড়ীর সামনে দিয়ে কেউ ঘোড়ার পিঠে বা সাইকেলে চড়ে যেতে পারত না। সবাইকে ঘোড়া বা সাইকেল থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে হতো। জমিদার বাবুদের হুকুম ছিল- কোন মুসলমান গরু জবাই করতে পারবে না।

একবার তাঁর চাচা হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ গঞ্জর খান (রহ.) বালক হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-কে বললেন, “বাবা! আমার একটা গরু জবাই করে দাও, পারবে না?” তিনি জবাব দিলেন- “অবশ্যই পারব।” তাঁদের বাড়ীর কিছু দূরে একটি গভীর জঙ্গল ছিল। ঐ জঙ্গলের কাছে কেউ দিনের বেলাও একা যেতে সাহস করত না। তিনি সেই গভীর জঙ্গলে রাতের বেলা কয়েকজন লোক নিয়ে একটি গরু জবাই করেন। পরদিন তাঁর বাবা তাঁর গরু জবাই করার কথা শুনে খুব রেগে যান। পুত্রকে ডেকে বলেন-’তুমি কার কথায় গরু জবাই করেছ? জমিদার বাবুরা একথা জানতে পারলে আমাদেরকে শত্রুর নজরে দেখবে’। তখন তিনি বাবাকে উত্তর দিলেন- “আব্বা! আপনি কোন দুশ্চিন্তা করবেন না। জমিদার বাবুরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না।”  

পরের দিন এক লোক জমিদারের কাছে গিয়ে নালিশ করে জানায় যে, হাজী কোরবান আলী সাহেবের ছেলে গতকাল একটি গরু জবাই করেছে। জমিদার বাবু হাজী সাহেবকে সন্মান করতেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- কখন জবাই করেছে? নালিশকারী জবাব দিল- রাতে জবাই করেছে। তখন জমিদার বাবু বললেন- আমাদের ভয়ে দিনে না করে রাত্রে জবাই করেছে, তবু তুমি নালিশ করতে এসেছ? এই বলে তিনি হুকুম দিলেন, যে গরু জবাই করেছে তার জরিমানা ৫০টাকা আর যে নালি করেছে তার জরিমানা ৫০ টাকা। অর্থাৎ বালক হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) তাঁর পিতাকে অভয় বাণী শুনিয়ে যে কথা বলেছিলেন তা বাস্তবায়িত হল।

 কৈশোরকাল থেকে হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) এর প্রকৃতিতে উদাসীনতা বৃদ্ধি পায় দেখে তাঁর পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে চর ব্রাক্ষনদী গ্রামের সূফী ও পরহেজগার হযরত মোহাম্মদ ইস্রাইল মুন্সী (রহ.) এর প্রথম কন্যা হযরত ছমিরননেছা খানম এর সাথে বিবাদ দেন। এখানে উল্লেখ যে, হযরত মোহাম্মদ ইস্রাইল মুন্সী (রহ.) এর বড় ভাই হযরত মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক (রহ.) জগদ্বিখ্যাত পীর হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী ওয়াজেদ আলী (রহ.) এর খলীফা হযরত শাহ্ সূফী আহম্মদ সুরেশ্বরী (রহ.) এর খেলাফতী লাভ করেন। তিনি ফার্সী, হিন্দী ও সংস্কৃত ভাষায় যথেষ্ট বুৎপত্তি লাভ করেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রেও তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল। তাঁর দেওয়া ফতোয়া নির্ভুল হতো। তাই কোন আলেম তাঁর দেওয়া ফতোয়ার বিরোধীতা করতে পারত না। ফেকাহ শাস্ত্রে তাঁর যথেষ্ট পান্ডিত্য ছিল । তাঁর পুত্র হযরত মাওলানা শাহ্ শামসুদ্দীন আহমদ (রহ.) ছিলেন পীরে কামেল, মোর্শেদে মোকাম্মেল হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রহ.) এর খলীফা এবং একজন প্রসিদ্ধ পীর। তাই এলাকার মধ্যে এই বংশের লোক ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র।

বিবাহের পরেই মুলত তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়। তাঁদের বাড়ীতে সুদীর্ঘ ১৭ বছর লজিং থাকা কুমিল্লার মোহাম্মদ নওয়াব আলী মৌলভীর নিকট হাতে কোরআন শরীফ শিক্ষা করেন। এরপর তিনি মোহাম্মদ নওয়াব আলী মৌলভী সাহের সাথে কুমিল্লায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি রাজারচর মাদ্রসায় ভর্তি হয়ে গভীর মনযোগ সহকারে লেখাপড়া শুরু করেন।এরপর তিনি চাঁদপুর ওসমানিয়া মাদ্রসা এবং মতলব থানার কামরাঙ্গা মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকার সরকারী হাম্মাদিয়া মাদ্রাসায় পাঠ সমাপ্ত করেন।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) এর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢেউখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের হেড মাওলানা হিসাবে। তাঁর এই বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করার পিছনে কয়েকটা কারণ ছিল। হিন্দু জমিদার বাবুরা এ দেশের মুসলমানদের উপর অত্যাচার করত। মুসলমানগণ ‘যবন’ বিধায় বাড়ির সামনে দিয়ে তাদেরকে ঘোড়া কিংবা সাইকেলে চড়ে যেতে দিত না। গরু জবাই  করা নিষিদ্ধ ছিল। এসব কারণে তিনি চিন্তা করলেন , জমিদারের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলে তারা গুরু হিসাবে সন্মান করবে। তাছাড়া হিন্দু জমিদাররা তাঁর উপস্থিতিতে কোন নিরীহ ‍মুসলানদের উপর অন্যায় অত্যাচার করার সাহস পাবে না। তাই তিনি অল্প বেতনে তিনি এ শিক্ষকতা গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর স্কুলটি উঠে যায় এবং তিনি জি,টি পড়তে যান। জি,টি পাশ করে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি মুন্সীর চর, দশহাজার ও চন্দ্রপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন।

তিনি কিছুদিন ফরিদপুর জজ কোর্টের জুরি হিসাবে কাজ করেছিলেন।এ সময় তিনি মামলার রায় প্রদানে তাঁর সুচিন্তিত ও সুবিবেচিত মতামত জ্ঞাপনের মাধ্য বিচরকগণের যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেন।তাঁর সত্যবাদীতার জন্য সকলে তাঁকে সন্মান করতেন।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) ঢাকা হাম্মাদিয়া মাদ্রাসায় পাঠরত অবস্থায় এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, শুভ্র পোষাক পরিহিত এক নূরানী চেহারা বিশিষ্ট একজন আউলিয়া তাঁর সামনে একখানা কুরসীতে বসে আসেন। তিনি হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-কে দেখে অত্যন্ত তামিজের সাথে উঠে দাঁড়ালেন। উক্ত আউলিয়া তাঁকে ইশারা করায় তিনি আদবের সাথে ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ে তাঁর কাছে গেলেন। তখন তিনি তাঁকে মুরীদ হতে বলায়  তিনি বায়েত গ্রহণ করেন।

স্বপ্ন দেখার পর তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়।তিনি এবং ব্রাক্ষনদীর হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী শামসুদ্দীন আহমদ (রহ.) কয়েক বছর ধরে খাঁটি পীর তালাশ করছিলেন। তাই এ স্বপ্ন দেখে তরীকা নেয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন।

ঐদিন সকালেই তিনি খবর পেলেন যে, ভারতের একজন নামকরা অলী-আল্লাহ পাটনা শহরের তাকিয়া শরীফের যরত খাজা হাজী সৈয়দ মোহাম্মদ হামিদ শাহ সাহেব আজিমপুরে এসেছেন। তিনি আগ্রহের সাথে ঐ পীর সাহেবকে দেখতে গেলেন। পীর সাহেবকে দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন কারণ উনিই তো রাতে স্বপ্নে দেখা সেই আউলিয়া। উক্ত পীর সাহেব তাঁকে কাছে ডেকে নিয়ে তরীকা নিতে বললেন। বাংলা ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ অগ্রহায়ন, ১৯৩৬ সালের নভেম্বর মাসে তিনি তাঁর কাছে বায়েত গ্রহণ করেন ।

তরীকা নেয়ার পর থেকে তিনি খুব বেকারার ও বেখুদী হালাতে থাকতেন যে, ফায়েজের তাছিরে অস্থির হয়ে নিজের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলতেন। অনেকক্ষণ এরুপ হালাতে থাকার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেন।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) ঢাকা হাম্মাদিয়া মাদ্রাসার পড়া শেষ করে যখন বাড়ি ফিরে আসেন তখন এক রাতে স্বপ্নে দেখেন যে, ৪-৫ জন লোক বসা আছেন। তিনিও তাদের সঙ্গে বসে আছেন। প্রত্যেকের সামনে একটা করে হারিকেন আছে। কিন্তু তাঁর সামনের হারিকেনটি ক্রমেই নিভে যাচ্ছে। তিনি হারিকেন জ্বালিয়ে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু আলো ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে নিভে গেল।

তিনি এই স্বপ্নের ব্যাখায় বুঝতে পারলেন যে তাঁর পীর সাহেব ওফাত লাভ করেছেন। তিনি ভারতের তাকিয়া শরীফে একখানা পত্র পাঠালেন । পত্রের জবাবে তিনি জানতে পারলেন যে তাঁর পীর সাহেব ইন্তেকাল করেছেন- (ইন্না…. রাজেউন) ।

তাকীয়া শরীফের পীর সাহেবের ওফাতের পর তিনি খাঁটি পীরের সন্ধানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গমন করেন। অবশেষে ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর, বাংলা ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ পৌষ মাসে পাবনা জেলার এনায়েতপুরে গিয়ে অলীয়ে মোকাম্মেল হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী এনায়েতপুরী (রহ.) হুজুরকেবলার কাছে গিয়ে বায়াত গ্রহণ করেন।

হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী এনায়েতপুরী (রহ.) হুজুরকেবলা নিজ হাতে তাঁর সর্বশরীরের ছবক দিলেন এবং বললেন- “বাবা! মনে রাখবেন, আজ থেকে আপনার যত ছবক আছে সব আমি নিজেই দেব।”

১৩৫৮ বঙ্গাব্দ ১৯৫০ সালে এনায়েতপুরে অনুষ্ঠিত ওরছ মোবারকটি ছিল হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী এনায়েতপুরী (রহ.) হুজুরকেবলার জীবদ্দশায় শেষ ওরছ।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) সেই ওরছে হাজির ছিলেন। ওরছের পর তিনি তাঁর মুর্শেদ কেবলা তাঁকে বলেন- “বাড়ি যান, বাড়িতে কাজ আছে ।” মুর্শেদ কেবলা নির্দেশে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন।

বাড়ীতে এসে তিনি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন- মুর্শেদ কেবলা বললেন যে, বাড়িতে যান, বাড়ীতে কাজ আছে। কিন্তু বাড়িতে তেমন কোন কাজ খুজে পেলেন না। এর ৭/৮দিন পর তাঁর মুর্শেদ কেবলার দরবার থেকে একটি টেলিগ্রাম পেলেন যে, তাঁর মুর্শেদ কেবলা হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী এনায়েতপুরী (রহ.) ওফাত লাভ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি..……..রাজিউন)।  এই সংবাদ পেয়ে তিনি পাগল পারা হয়ে যান। তাঁর হৃদয়ে মাশুকের চির বিচ্ছেদ যাতনা থেকে থেকে আঘাত হানতে থাকে। তিনি অত্যন্ত  মর্মাহত হয়ে পড়েন। ছটপট করতে থাকেন। চোখের পানি দ্বারা তাঁর বুক ভেসে যায়। তিনি এনায়েতপুর রওনা হলেন। মঙ্গলবার বা বুধবারে তিনি এনায়েতপুর পৌঁছে দেখেন যে তাঁর মুর্শেদ কেবলাকে সোমবার দিন দাফন করা হয়েছে। তাই তিনি মাজার শরীফে গিয়ে বেহাল বেকারার হয়ে অশ্রু বিসর্জন করেন। তাঁর এ কান্না প্রকাশ করার বিষয় না।

আল্লাহ পাকের অসীম দয়ায় হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) হুজুর নিজের প্রাণাপেক্ষা প্রিয় মাশুকের বিয়োগ ব্যাথা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠলেন। জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক হয়ে যান । এরপর তিনি তরীকার সাধনায় পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করেন।

যেহেতু তাঁর মোর্শেদ কেবলার নিকট থেকে সকল ছবক নিতে পারেন নাই, তাই তিনি ছবক শিক্ষার জন্য টাঙ্গাইলের মাওলানা মকিম উদ্দিন সাহেবের কাছে যান । কিন্তু তিনি কোন আগ্রহ নিয়ে কোন ছবক দিলেন না। এরপর তিনি এনায়েতপুর দরবারের মৌলভী মোহাম্মদ আছর উদ্দিন সাহেবের কাছে গিয়ে কয়েকটি ছবক শিক্ষা করেন। এরই মাঝে হঠাৎ একদিন তাঁর খেয়াল হল যে, তাঁর মোর্শেদ কেবলাজানের কথাটি- আপনার যত ছবক আছে সব আমি নিজেই শিক্ষা দিব। তখন তিনি চিন্তা করলেন- তাহলে আমি অন্যের কাছে যাই কেন? তাই তিনি আর কারো কাছে না গিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সাধনা শুরু করলেন। সাধনার কিছু দিনপর তাঁর কানে আওয়াজ আসতে থাকে “নোট কর, নোট কর।” তখন হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) চিন্তা করলেন- আগা নাই, গোড়া নাই, কিসের নোট করব?” অর্থাৎ কোন বিষয় নোট করবেন আর কেনই বা নোট করবেন, তা তাঁর জানা নাই- তাই তিনি কোন বিষয়ে নোট করবেন? এই আওয়াজ কোথা থেকে আসলো, এটা তিনি প্রথমে বুঝতে পারলেন না। কিন্তু এই আওয়াজ আসার পর থেকে তাঁর মাঝে অন্য একটা হালত চলে আসে। তিনি কাগজ ও কলম নিয়ে নোট করতে শুরু করলেন। তিনি ২৪দায়রা এবং তরীকার সমস্ত ছবকগুলো নোট করে ফেলেন। যখন যে ছবক নোট করেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে সেই ছবকে হাকীকত খুলে যায় এবং ফানা বাকা হতে শুরু করে।তাঁর কাছে নতুন নতুন মাকামাতের সুসংবাদ আসতে লাগল এবং মাকামাতের ভেদ রহস্য খুলে গেল। এ সময় তাঁর অবস্থা এরুপ হলো যে, তিনি অধিকাংশ নবী,রাসূল, পয়গম্বর এবং আউলিয়াগণের বুজর্গীপূর্ণ দরজাসমুহ ত্বয় ও হাসিল করার মর্তবাপূর্ণ মহান নেয়ামত লাভ করেন। তাঁর কাছে বেলায়েতের হকীকত খুলে যেতে লাগল এবং বেলায়েতের স্তর সম্পর্কে অবগত হওয়ার মতো খোশ নসীব ও বস্তু হাসিল করেন। ফলে নিজের কামালিয়াতের দরজা সম্পর্কে যা দেখলেন তার সামান্যতমও প্রকাশ করলেন না। এ সময় তাঁর আহার নিদ্রা প্রায় ছিল না বললেই চলে। তিনি মানুষের সাথে বিশেষ কথাবার্তা বলতেন না। সারারাত বসে লিখতেন। অবশেষে একদিন তিনি চার তরীকার পূর্ণতা প্রাপ্তির সুসংবাদ প্রাপ্ত হন।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) তাঁর মোর্শেদের নিকট বায়েত হওয়ার পর পরই তাঁকে তরীকা প্রচারের আদেশ দেন। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সদা সর্বদা আল্লাহর এশক মহব্বতে ডুবে থাকা । তাই তিনি মানুষের কাছে তরীকা প্রচার করতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। তাঁর দেহ মন সর্বক্ষণ আল্লাহর প্রেমে মশগুল থেকে সৃষ্টিতত্ত্বের রহস্য উন্মোচন ও বেলায়েত পরিচালনায় মগ্ন। তারপরও মোর্শেদের নির্দেশ পালন করার জন্য নিজ এলাকায় এসে তিনি মাত্র তিনজনকে তরীকা দিলেন। এর কিছুদিন পর তিনি এনায়েতপুর দরবার শরীফে গেলে তাঁর মুর্শেদ কেবলা হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী এনায়েতপুরী (রহ.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “ বাবা  কতজন লোক তরীকা দিয়েছেন?” তিনি বললেন- ”তিন জন।” তখন তাঁর মোর্শেদ তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ”কেন, আর লোক তরীকা নিতে চায় না?” তিনি নিরুত্তর রইলেন। কারণ তিনি নিজেই তো ইচ্ছা করে মানুষকে আটরশী কিংবা ব্রাক্ষনদী পাঠিয়ে দিতেন। এরপর তাঁর মুর্শেদ কেবলা হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী এনায়েতপুরী (রহ.) তাঁকে অনেক করে বুঝালেন। বললেন, ”বাবা, একটা লোককে বুঝিয়ে সৎ রাস্তায় আনলে সে যদি নেকীর কাজ করে তবে তার যতটুকু নেক হবে, যার মাধ্যমে বা উছিলায় উক্ত ব্যক্তি সৎ পথ পেল সেও ততখানি সওয়াব পাবে। আপনি একজন ভাল আলেম। কুরআন, হাদীস তো বুঝেন। তাই মানুষকে হেদায়েত করেন। হেদায়েতের কাজ হযরত রাসূল (সঃ) করে গেছেন। সাহাবাকেরাম করেছেন, তাবেঈন,তাবে তাবেঈনগণ করেছেন,হযরত বড়পীর (রহ.) সাহেব, হযরত খাজা মঈন উদ্দিন (রহ.) সাহেব, হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহ.) সাহেব এবং অনান্য অলী আউলিয়াগণ করেছেন এবং এখনও করছেন। এটি একটি ভাল কাজ, আপনিও করেন।বাবা, আমার হুকুম মানবেন না?” হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) তখন জবাব দিলেন-”জ্বী হুজুর। আপনার হুকুম মানবো।” এরপর বাড়ীতে এসে ৪/৫ করে তরীকা দিতে লাগলেন। খুব বিশেষ একটা জোর দেন না। শুধু মোর্শেদের হুকুম পালন করেন মাত্র। কিন্তু তাঁর মোর্শেদের ওফাতের পর একদিন এনায়েতপুর দরবার শরীফের সজিদে বসে চিন্তা করেন “ আমি মানুষকে কি তরীকা দিব? আমি তরীকা কি বুঝি? আমার মতো মানুষের পীরগিরি করা উচিত হবে না। ইত্যাদি। এমন সময় তাঁর মোর্শেদ রুহানীতে হাজির হন এবং তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন,” এই মিয়া তুমি আজেবাজে চিন্তা করো? আমি তোমাকে বলি মানুষকে তরীকা দেওয়ার জন্য, তুমি আমার কথা মানো না। যদি আমার কথা না মানো তবে যাও তোমার যা ইচ্ছা হয় করো।” এই ঘটনার পর থেকে যারা তাঁর কাছে তরীকা নিতে আসেন, তিনি অধিকাংশকে বায়েত করতে শুরু করেন। এমনিভাবে তিনি তাঁর মোর্শেদের বার বার হুকুম দেওয়ার ফলে তরীকা প্রচারে বাধ্য হন। তিনি তাঁর জাকেরদের উদ্দেশে বলেন,” আমি পীর-মুরিদী করতে জগতে আসে নাই। কিন্তু যখন দেখলাম অন্যত্র তরীকা নিয়ে মানুষের ক্বালব জিন্দা হচ্ছে না অর্থাৎ ক্বালবে জ্বিকির চালু হচ্ছে না,মানুষগুলো বেঈমান হয়ে কবরে যাবে জাহান্নামী হবে, তখন তরীকা দিতে বাধ্য হলাম।”

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) এরপর তরীকা প্রচারের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করেন। তরীকা প্রচারের পাশাপাশি এলমে শরীয়ত ও এলমে মারেফতের উপর বেশ কয়েকটি অমূল্য কিতাব রচনা করেন। তাঁর কিতাবসমূহ আধ্যাতিক জগতের বহু রহস্যপূর্ণ তত্ত্বে ভরপুর যা সূফী সাধকদের আত্মার খোরাক স্বরুপ। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে নূরুল আসরার (নূর তত্ত্ব) ১ম ও ২য় খন্ড, হাক্কুল ইয়াকীন (অনুভবলব্ধ জ্ঞান) এবং সুলতানীয়া খাবনামা (স্বপ্নতত্ত্ব) উল্লেখযোগ্য ।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) তাঁর মোর্শেদের প্রচারিত মোজাদ্দেদীয়া তরিকাকে অধিকতর সহজ করে মানুষকে আত্মাশুদ্ধ, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরী এই তিনটি বিষয়ের উপর অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করে তাঁর শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করে নতুন তরীকা প্রবর্তন করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি প্রায়ই বলতেন- “যে জাহান্নামী, সে আমার তরীকায় শামীল হবে না আর হলেও শেষ পর্য়ন্ত থাকতে পারবে না।”

তিনি আরও বলতেন-” আমার এখানে তিনটি জিনিস জোর দিয়ে, গুরুত্ব সহকারে শিক্ষা দেই- আত্মাশুদ্ধ, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরী।”

তাঁর এই ফলে অতি পাপী মানুষও অতি অল্প সময়ে অল্প পরিশ্রমে কুলষিত আত্মাকে পাপমুক্ত করে, ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির পয়দা করার মাধ্যমে এবং নামাজে হুজুরী অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে থাকে। এই তরীকাই পরবর্তীতে সুলতানীয়া- মোজাদ্দেদীয়া তরীকা নামে প্রসিদ্ধ লাভ করে এবং তিনি এই তরীকার ইমাম হন।

৬৩ বছর বয়সে তিনি তাঁর সুযোগ্য উত্তরসুরীর জন্য আল্লাহর দরবারে মানত করেন। আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় বন্ধুর মনোবাঞ্চনা পূরণ করেন ১৯৭৪ সালের ওরছের অনুষ্ঠানে। সেই অনুষ্ঠানে বর্তমান সময়ের মহান রাব্বুল আলামীনের প্রিয় বন্ধু এবং রাহমাতাল্লিল আলামীনের সিরাজাম মুনীরের ধারক ও বাহক, জগতশ্রেষ্ঠ তাসাউফ বিজ্ঞানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, মহান সংস্কারক, সকল ধর্মের শান্তির দূতমোহাম্মদী ইসলামের পূনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুরকেবলা যখন তাঁর দরবারে উপস্থিত হয়ে  তাঁকে কদমবুচি করতে যান তখনই তিনি তাঁর উত্তরসূরীকে চিনতে পারেন।

ইমাম হুজুর তাঁর পছন্দনীয় ব্যক্তি যে আল্লাহর পছন্দীয় একথা নিশ্চিতের জন্য সলবের লোকদের ‍৬ বার বসিয়ে দেখতে বলেন যে সূফী সম্রাট আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত তাঁর উত্তরসূরী কিনা?

ওরসের অনুষ্ঠান শেষ হবার দুই মাস পর ইমাম হুজুর তাঁর চতুর্থ কন্যা হযরত সৈয়দা হামিদা এর সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন এবং ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে সূফী সম্রাটের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৯৭৫ সালে সেনা বাহিনীর চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে ইমাম হুজুরের খেদমতে নিজেকে নিয়োগ করেন এবং সারা বাংলাদেশে তাঁর মোর্শেদ এর সুলতানীয়া- মোজাদ্দেদীয়া তরীকার প্রসারে অবদান রাখেন।

হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.) ১৯৮৪ সালের ২৮শে মার্চ রোজ বুধবার বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে জগতবাসীকে এতিম করে, গভীর শোক সাগরে ভাসিয়ে দারুল বাকায় তশরীফ নেন। ৩০শে মার্চ ১৯৮৪ রোজ শুক্রবার  বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে তাঁর শরীর মোবারক রওজা শরীফে স্থাপন করা হয়।

Post a Comment

0 Comments