হযরত শাহরাস্তি বোগদাদী (রহ.) এর জন্ম ১২৩৮ সালে ইরকের বাগদাদে। তিনি ছিলেন বড়পীর খ্যাত হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর আত্মীয়; তার পিতা ছিলেন বড়পীর সাহেবের ভাগ্নে এবং একজন উচ্চমানের আল্লাহর অলী ।
হযরত শাহরাস্তি জন্মস্থান ইরানের রাজধানী তেহরান সিটি অতি নিকটবর্তী একটি ছোট শহরের নাম 'রাস্ত' এই 'রাস্তা শহরে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর জন্ম। জালাল চৌধুরী বলেন, "হযরত রাস্তিশাহ্ এর অন্যতম সহচর ছিলেন সৈয়দ আহমদ তানভি। এদেশে আসার পূর্বে তিনি ৭৩৮ বঙ্গাব্দে ইয়েমেন যান এবং স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশে আগমন করেন। সে কারণে অনেকে তাঁহাকে ইয়েমেনী বংশোদ্ভূত বলে মনে করেন।"
লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর বলেন, "ইসলাম প্রচারক রাস্তিশাহ্ সম্পর্কে যদ্দুর জানা যায়, তাঁকে ইরাক-এর বাগদাদ শহরের বাসিন্দা বলেই মনে হয়। তাঁর পিতা ছিলেন হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর ভাগ্নে।"
"তিতাশ চৌধুরী, 'দরবেশ ও দরগার কথা' গ্রন্থে বলেন, হযরত শাহরাস্তি সুদূর পারস্য থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য বাংলাদেশে আসেন। "
কুমিল্লা জেলায় ইসলাম প্রচার গ্রন্থের লেখক, আবদুল কুদ্দুস বলেন, "হযরত শাহরাস্তি, হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর বংশধর। যেহেতু হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) বাড়ি বাগদাদে। অতএব হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) তাঁর ভাগ্নের ছেলে হওয়ায় তাঁর বাড়িও ইরাকের বাগদাদ নগরীতে।"
"কুমিল্লা জেলার ইতিহাস" গ্রন্থের 'ধর্মীয় সাধনা' অধ্যায়ের চার পৃষ্ঠায় বলা আছে, "চিরকুমার রাস্তিশাহ্ (রহঃ) আরব মুলুক থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য কয়েকজন অনুগত শিষ্যসহ বঙ্গদেশের মেহের পরগনায় আগমন করেন।”
এই তথ্য মতে প্রতীয়মান হয় যে আরবমূলক বলতে ইরাককে
বুঝানো হয়েছে। তৎকালীন যুগে আরবের বাগদাদ নগরীর দরবেশগণই সমগ্র পৃথিবীতে ইসলাম
প্রচারের জন্য ছড়িয়ে যান।
"হাজী গাজী" গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক দেলোয়ার বিন মফিজ উদ্দিন বলেন, " শাহরাস্তি থানার এবং শ্রীপুর গ্রামের শত শত বছরের জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রমান পাওয়া যায় যে, হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) বাগদাদ নগরীতেই জন্মগ্রহণ করেন। এ কারণে তাঁহাকে হযরত শাহরাস্তি বাগদাদী (রহঃ) বলা হয়ে থাকে। ইয়ামেনে সফর করার কারণে তাঁহাকে শাহরাস্তি ইয়ামেনীও বলা হয়।"
হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর জীবনী লেখক, দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী তদীয় গ্রন্থ হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর ৯২ পৃষ্ঠায় বলেন, "রাজশাহীর শাহ্ মখদুম (রহঃ) নোয়াখালীর মিরান শাহ্ (রহঃ) কুমিল্লার রাস্তিশাহ্ (রহঃ) পরস্পর আত্মীয় ছিলেন।
মোহাম্মদ আবূ তালিব "শাহ্ মখদুম (রহঃ)" নামক পুস্তিকায় বলেন, "শাহ্ মখদুম ইয়ামনী ছিলেন। স্থানীয় জনশ্রুতীতে ও তাঁহাকে ইয়ামনী বলিয়া দাবি করা হয়। যার কারণে হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) তাঁর আত্মীয় হওয়ায় তাঁহাকেও ইয়ামনী বংশোদ্ভূত বলা যাইতে পারে।"
"স্থানীয় শ্রুতী কথায় হযরত শাহরাস্তি (রহঃ)-কে বাগদাদের ও ইয়ামেনের বাসিন্দা বলা হয়ে থাকে। " অবশ্য এ ব্যাপারে একটি জোরালো দলীল এই যে, হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) যেহেতু হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর ভাগ্নের ছেলে তাই তাঁর জন্মস্থান বাগদাদে হওয়াটাই বেশী প্রাধান্য পাবে। কেননা হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) বাগদাদের। হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) ইয়ামেনে কিছুকাল থাকার কারণেই হয়তঃ তাঁহাকে ইয়ামেনী বলা হয়ে থাকে। অথবা হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) শিক্ষার জন্য ইয়েমেন সফর করেছেন, এজন্য তাঁহাকে শাহরাস্তি ইয়ামেনী বলা হয়।
হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) যেহেতু হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর বংশধর ছিলেন সেহেতু ছোট বেলা থেকেই তিনি ধর্মীয় শিক্ষায় দিক্ষা লাভ করেন। তাঁর শৈশব, বাল্যকাল এবং যৌবন অতিবাহিত হয় এলমে শরীয়ত, এলমে মারেফত এর কঠোর শিক্ষার মাধ্যমে।
"আধ্যাত্মিক পথ প্রশস্ত করিবার জন্য এবং তত্ত্ব জ্ঞানের মর্ম অনুধাবনের নিমিত্ত পীরে কামেলের সাহচর্য প্রত্যেক সাধকের জন্য অপরিহার্য। "উপযুক্ত পীরের ফয়েজ লাভ প্রতিটি সাধক কৃতার্থ হইতে পারেন। হযরত শাহরাস্তি (রহঃ)ও এই উদ্দেশ্যে তৎকালীন তরীকতের শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ-মহাসাধক শায়খ আবু সাঈদ মাখদুমী (রহঃ)-এর তরিকার পরবর্তী বুজর্গ এক মহান সাধক হযরত বড়পীর মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর বংশের অলী শাহ্সূফী সৈয়দ আহমদ তনুরী ওরফে সৈয়দ মীরান শাহ্ (রহঃ)-এর নিকট বায়য়াত গ্রহণ করেন। উক্ত পীরের দরবারে উপস্থিত হইয়া হযরত শাহরাস্তি (রহঃ) নিজের মনোবাসনা ব্যক্ত করিলে শায়খ, সৈয়দ আহমদ তনুরী (রহঃ) তাঁহার মধ্যে প্রকৃত শিষ্যত্বের যোগ্যতা অবলোকন করিয়া তাঁহাকে মুরীদ করিলেন। এবং মারেফাতের গুপ্ততত্ত্ব সম্পর্কে তাঁহাকে অবহিত করিলেন। কীর্তিমান সুখ্যাতি সম্পন্ন শিস্য অচিরেই পীরের দীক্ষায় ক্রমোন্নতি লাভ করিয়া মারেফাতের উচ্চ সোপানে আরোহণ করিতে লাগিলেন।
চিরকুমার হযরত রাস্তিশাহ ওরফে শাহরাস্তি (রহ.) আরবের বাগদাদ নগরী থেকে কয়েকজন শিষ্যসহ ইয়েমেনে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর নিকট আসেন। যেখান থেকে হযরত শাহজালালের (রহ.) বায়াত গ্রহণ করে তাঁর সাথে ৩৬০ জনের সফর সঙ্গী হিসাবে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আগমন করেন। তিনি যখন এদেশে আসেন তখন দিল্লির সুলতান ছিলেন ফিরোজ শাহ্ এবং বাংলার সুবেদার ছিলেন ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ। হযরত শাহরাস্তি বা রাস্তি শাহের অন্যতম সহচর ছিলেন সৈয়দ আহমেদ তানভী (রহ.) কনিষ্ঠ ভ্রাতা হযরত শাহ্ মাহবুব (রহ.)।
হযরত শাহরাস্তি (রহ.) পূর্ব হইতেই বাগদাদ হইতে ইয়ামন আসিয়া হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর জন্য অপেক্ষা করিতে ছিলেন। হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর জন্মস্থান ইয়ামন নগরীতে চতুর দিক হইতে অলী আল্লাহগণ আসিয়া একত্রিত হইতে লাগিলেন। সকলের উদ্দেশ্য শাহ্জালালের সাথে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য গমন করা। ইয়ামন হইতে হযরত শাহ্জালাল (রহ.) ও হযরত শাহরাস্তি (রহ.) সহ অন্যান্য সকলে বাগদাদে আসিয়া উপস্থিত হন। এখানে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর পীর হযরত বাহাউদ্দীন সুহরাওয়ার্দী (রহ.)-এর খেদমতে হাজির হইয়া বিদায় গ্রহণ করেন। বাগদাদ হইতে আরো কয়েকজন দরবেশ হযরত শাহরাস্তি (রহ.) ও হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গী হন। তন্মধ্যে জয়েনউদ্দীন আব্বাসী (রহ.), নিজামউদ্দীন বাগদাদী (রহ.) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
হযরত শাহ্জালাল (রহ.) ও শাহরাস্তি (রহ.) বাগদাদ হইতে সমর কন্দ, বুখারা, আফগানিস্তান হইয়া পাকিস্তানের মুলতানে আসিয়া উপস্থিত হন।পরে মুলতান হইতে হযরত শাহ্জালাল (রহ.) ও হযরত শাহরাস্তি (রহ.) সকল সঙ্গীগণসহ সদল বলে দিল্লী গমন করেন। এইবার হযরত নিযামউদ্দীন (রহ.) তাঁহাদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানাইলেন। সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবন (১২৬৬-১২৮৭ খ্রীস্টাব্দ) তখন দিল্লীর সিংহাসনে সমাসীন ছিলেন। সুলতান ইয়ামন রাজসহ তাঁহার দলীয় সুফি দরবেশদের থাকার ব্যবস্থা করিলেন। তাঁহারা যেখানে অবস্থান করিতেন আজও তাহা দিল্লীতে 'ইয়ামনী মহল্লা' নামে পরিচিত।
দিল্লী হইতে বাংলাদেশে রওয়ানার পথে হযরত নিযামউদ্দীন (রহ.) হযরত শাহজালাল (রহ.)-কে এক জোড়া কবুতর উপহার দেন ইহা 'জালালী কবুতর' নামে আজও বাংলাদেশে পরিচিত।
দিল্লী হইতে হযরত শাহ্জালাল (রহ.) ও হযরত শাহরাস্তি (রহ.) সহ তদীয় সঙ্গীগণ বাংলাদেশের পথে বদায়ূন আসিয়া উপস্থিত হন। এ সময় সকল সঙ্গীগণকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অনাহারে থাকতে হয়েছে। এমনকি হযরত শাহজালাল (রহ.) এর নিকট তিনদিন পর্যন্ত পানাহারের বস্তু কিছুই ছিল না, তিনি কাহারও নিকট হইতে কিছু গ্রহণ করিতেন না। তাঁহার সঙ্গীগণ তরমুজ দ্বারা ইফতার করিতেন।হযরত শাহরাস্তি (রহ.) ও এই কষ্ট ভোগ করিয়াছেন।
বদায়ূনে হযরত শাহ্জালাল (রহ.) ও হযরত শাহরাস্তি (রহ.) দীর্ঘদিন ছিলেন। হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর উদ্যোগে ৩৬০ আউলিয়া সকলের চেষ্টায় আলেফ খান মহলের নিকটে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
৭৪৫ বঙ্গাব্দে ৬৫৮/৬৬৪ হিজরী ১২৫৯/১২৬৫ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) বাংলাদেশে এসে উপস্থিত হন।
আখতার দেহলবী প্রণীত
"তাজকিরায়ে আউলিয়া-এ হিন্দ" নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে "অবশেষে শাহ্জালাল,
শাহরাস্তি কিছুকাল বদায়ূন অবস্থান করে তদীয় সঙ্গীদেরকে নিয়ে বঙ্গদেশাভিমুখে রওয়ানা
হইলেন।”
এক বর্ণনায় জানা যায় যে, "হযরত শায়খ জালাল (রহ.) ও
হযরত শাহরাস্তি (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়া বাংলাদেশের লক্ষণাবতীতে প্রথম শুভাগমন করেন। এখানে
তাহারা দেও-দৈত্য দমন করিয়া মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করেন।”
“৩৬০আউলিয়া ও হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে "হযরত লাখনৌতি" "হযরত পাণ্ডুয়া" "হযরত লক্ষনাবতী" মুদ্রা চালু করা হয়। এ সকল মুদ্রা তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনার গাঁও হইতে মুদ্রীত হইত।” এমতাবস্থায় লক্ষণাবতীতে স্বল্পকাল ইসলাম প্রচার পূর্বক "হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও ৩৬০ আউলিয়া পাণ্ডুয়া ও দেওতলাকে কেন্দ্র করিয়া ব্যাপক ইসলামী দাওয়া আন্দোলনে আত্মোনিয়োগ করেন।"
আজও উত্তর বঙ্গে
পাণ্ডুয়ায় (বর্তমান রাজশাহী) হযরত শাহ্জালাল (রহ.) ও ৩৬০ আউলিয়া নওমুসলিম খানকায় আগত
মুসলমানদের জন্য হযরত শাহজালাল (রহঃ) এই লঙ্গরখানা চালু করেছিলেন। ইহা 'বাইশ হাজারী'
নামে পরিচিত।
১২২৪ সাল, ৬৯৫/৬৯৮ বঙ্গাব্দে পরগনা ছিল পৌত্তলিকদের চারণভূমি। সে সময়ে মেহের পরগনায় হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর পদচারণায় ইসলামের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রচলিত হয়। শ্রীপুর একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম। এখানে ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্র, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্য, শূদ্র, ঠাকুর পরিবারসহ জেলে, তাঁতী, কামার-কুমারের বসবাস।
৭০৩বঙ্গাব্দ /১৩০৩ সালে বাংলার সুলতান ফিরোজশাহ্ (১৩০১-১৩২২) এর শাসন আমলে সিলেট বিজয় হয়। ফিরোজশাহ্ তখন বিহার, লাখনৌত, সাতগাঁও, সোনারগাঁও, ময়মনসিংহ, পান্ডুয়ায় রাজত্ব করেন। হযরত শাহজালালের নেতৃত্বে ৩৬০ আউলিয়া সিলেট বিজয়ের পর তিনি ১৩০৩ সাল হইতে সিলেটে হযরত শাহজালালের নির্দেশে রাজত্ব করেন। ৩৬০ আউলিয়া সিলেট বিজয়ের পর হযরত শাহজালালের নির্দেশে সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়েন। হযরত শাহজালালের সঙ্গী ও সিলেট বিজেতা হিসাবে দিল্লীর তুঘলক সম্রাট ফিরোজশাহ্ তুঘলক (১৩৫১- ১৩৮৮) হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-কে নিষ্কর জমি দান করেন ।
ফিরোজশাহ্
ছিলেন ইসলামের প্রতি নিষ্ঠাবান। তাঁহার আত্মজীবনী "ফতুহাতে ফিরোজশাহী" নামক
গ্রন্থে তিনি ইসলামের অনুসারী হিসাবে গর্ববোধ করিয়াছেন। তিনি ধর্মের উপর ভিত্তি করিয়া
রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়িয়া তোলেন। এবং কোরআনের অনুশাসন অনুযায়ী রাজ্য শাসন করিতেন। এই
ক্ষেত্রে তিনি আলেম, ফকির, দরবেশদের পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। আব্বাসীয় খলীফার প্রতি তাঁহার
আনুগত্য ছিল। ফকির, দরবেশ, অলী, আউলিয়া, পীর, মাশায়েখ ও সূফী সাধকদেরকে তিনি লাখেরাজ
জমি দান করিতেন। মুসলমানদের মধ্যে রক্তপাত করাকে তিনি সাংঘাতিক অপরাধ বলিয়া মনে করিতেন।
তাঁহার উদার নীতির কারণে বিভিন্ন রাজ্য স্বাধীন হইয়া যায়। তাঁহার অন্তরের প্রসারতা
ছিল।"
হযরত শাহজালালের সফরসঙ্গী হিসেবে শাহরাস্তি (রহ.) সিলেটে কিছুকাল অবস্থানের পর হযরত শাহজালাল (রহ.) একদিন হযরত শাহরাস্তি (রহ.) কে বলেন, তোমাকে ইসলাম প্রচারের জন্য যেতে হবে। তোমার ধর্ম প্রচারের স্থান হবে সেটাই যেখানে তুমি পথ চলতে গিয়ে পাহাড় পাবে। হযরত শাহজালালের কথা অনুযায়ী হযরত শাহরাস্তি (রহ.) সিলেট থেকে ত্রিপুরার (কুমিল্লা) দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। এক পর্যায়ে বর্তমান লালমাই পাহাড়ের কাছে এসে তিনি বলে উঠলেন, ‘‘কুমিল্লা’’ অর্থাৎ পাহাড় পাওয়া গেছে। ‘কুহ' অর্থ পাহাড় ‘মিলা' অর্থ পাওয়া গেছে। সেই থেকেই ‘‘কুমিল্লা’’ শব্দের রূপান্তর। অপভ্রংশ হয়ে বর্তমান কুমিল্লা উৎপত্তি হয়েছে।
হযরত রাস্তিশাহ্ (রহ.)-খানিক বিশ্রামের জন্য যাত্রা বিরতি করলেন। শরীর এলিয়ে দিলেন পাহাড়ের পাদদেশে। এ সময় তিনি দেখতে পেলেন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে একটি বড় বাঘ তার দিকে বিনম্র ভাবে এগিয়ে আসতেছে। প্রথমে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলেন যে, না বাঘটি আক্রমনের উদ্দেশ্যে আসতেছে না। স্বাভাবিক গতিতে ধীরে ধীরে হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর দিকে এগিয়ে আসতেছে। কিন্তু না বাঘটি এসে কোন হুংকার না ছেড়েই রাস্তি শাহের পায়ের কাছে এসে বসলো। এমন সময় হযরত রাস্তিশাহ্ (রহ.), হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর কন্ঠের দৈববাণী শুনলেন। বাঘের পিঠে উঠে বসার জন্য, বাঘ যেখানে গিয়ে বসবে এবং হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর হাতের সম্বল লাঠি যেদিকে যাবে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) যেন সেখানে গিয়ে ইসলামী দাওয়া আন্দোলনের কাজে নিয়োজিত হন।
হযরত শাহরাস্তি (রহ.)আর দেরী না করে বাঘের পিঠে
চেপে বসলেন এবং হাতের সম্বল লাঠিটি সামনের দিকে এগিয়ে ধরলেন। বাঘ হলো বাহন আর লাঠি
হলো পথ প্রদর্শক। এগিয়ে যাচ্ছেন হযরত শাহরাস্তি (রহ.) তার নির্দিষ্ট স্থানে।
অবশেষে বর্তমানে যেখানে মাজার, বাঘ সেখানে এসে থামল। হযরত শাহরাস্তি (রহ.) ভাবলেন
এটাই তাঁর ধর্ম প্রচারের উপযুক্ত স্থান। তারপর বর্তমান মাজারের সামান্য দক্ষিণ
পূর্ব কোণে বর্তমানে যেখানে মসজিদ সেখানে তিনি স্থাপন করলেন হুজরা খানা বা খানকা।
শুরু করলেন ইসলামী দাওয়া আন্দোলনের কাজ।
তৎকালীন
এই শাহরাস্তি উপজেলা, হাজীগঞ্জ উপজেলা, ও কচুয়া উপজেলা এলাকাটি ছিল হিন্দু জনবসতি
পূর্ণ। হিন্দু ধর্মের লোকেরা দরবেশের এই আগমণে নিজেদেরকে ধন্য মনে করে দলে দলে
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে লাগলেন।
দরবেশ হযরত শাহরাস্তি (রহ.) অত্যান্ত উদার ছিলেন। তাঁর আস্তানার অদূরে ছিল মেহার বনাঞ্চল। বনাঞ্চলে ছিল বাঘ, ভালুক, সিংহসহ মানুষের জীবননাশকারি বন্য জন্তু, জানোয়ার। রাত্রি অন্ধকারে বন্যজন্তুর ভয়ে কেহই ঘর হইতে বাহির হওয়ার সাহস করিত না। ঘুমন্ত মায়ের বুক থেকে শিশু সন্তানকে বন্য প্রাণী কেড়ে নেওয়ার মত হৃদয় বিদারক অনেক ঘটনা নিত্য দিনের।
জ্বীন, ভূত এর উপদ্রব দিনে দুপুরেও মানুষের
ক্ষতির কারণ বহু আগ থেকে। অথচ হিন্দুগণ তখন প্রত্যক্ষ চোখে দেখছেন হযরত শাহরাস্তি
(রহ.)-এর খানকায় দিব্যি বসে আছে বণের হিংস্র প্রাণী বাঘ। তাতে তাদের মধ্যে
কৌতূহলের সৃষ্টি হল। তারা দলবদ্ধভাবে মেহেরের রাজা জটাধর এর নিকট আবেদন করল, আপনি
যদি এই ফকির দরবেশকে অনুরোধ করেন বন্য হিংস্র জন্তুর হাত থেকে আমাদের প্রাণ রক্ষার
জন্য তাহলে হয়ত তিনি আপনার অনুরোধ রক্ষা করবেন। তাতে আমরা বনের হিংস্র জন্তু ও
জ্বীন, ভূতের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাব।
জনগণের
অনুরোধ রাজার নিকট যুক্তি সংগত মনে হল। এদিকে মেহেরের সর্বানন্দ ঠাকুর অমাবস্যার
রাত্রে সিদ্ধি লাভের জন্য বনের ভিতর নির্জন স্থানে থাকতে সাহস পাচ্ছেন না। তাই
তিনিও রাজাকে অনুরোধ করলেন ফকিরকে বলার জন্য। রাজা জনসাধারনের নিরাপত্তা ও সর্বানন্দ
ঠাকুরের অনুরোধে একদিন হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর খানকায় আসলেন। তিনি দেখতে পেলেন
হুজরা খানার সামনে বনের হিংস্র প্রাণী বাঘ বসে আছে। প্রথমে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন।
পরে দেখলেন যে, না বাঘটি শান্তভাবে বসে আছে। তবুও দূর থেকে তিনি হযরত শাহরাস্তি (রহ.)এর
সাথে সাক্ষাতের জন্য তাঁর শিষ্যদেরকে আহ্বান করলেন। হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর
মুরীদগণ রাজা জটাধর এর নিকট গেলেন। রাজা বললেন, তোমাদের দরবেশের সাথে আমি সাক্ষাৎ
করার জন্য এসেছি। তিনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আসব। মুরীদগণ প্রশ্ন করলেন আপনার
পরিচয় কি? উত্তরে রাজা বললেন, আমি এই অঞ্চলের রাজা জটাধর দাস। মুরীদগণ হযরত শাহরাস্তি
(রহ.)-এর নিকট গিয়ে বললেন এ অঞ্চলের রাজা জটাধর দাস আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে
এসেছেন, আপনি অনুমতি দিলে তিনি আসবেন। হযরত শাহরাস্তি (রহ.) বললেন তাকে আসতে বল।
রাজা অনুমতি পেয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে খানকায় প্রবেশ করে হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-কে
তার প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বললেন এবং এর একটা বিহিত ব্যবস্থা করার জন্য হযরত শাহরাস্তি
(রহ.) এর পায়ে পড়ে কান্না শুরু করে দিলেন।
হযরত শাহরাস্তি (রহ.) বললেন যাও বন্য হিংস্র কোন প্রাণী এবং জ্বীন, ভূত তোমাদের আর কোন ক্ষতি করিবে না। কৃতজ্ঞ বদনে রাজা খানকা থেকে বাহির হয়ে আসলেন। এরপর থেকে মেহের বনাঞ্চলে আর কোন হিংস্র প্রাণী রইল না। জ্বীন-ভূতেরও কোন উপদ্রব নাই। জন সাধারণ দরজা খুলে ঘুমালেও এখন আর তাদের উপর হিংস্র প্রাণীর আক্রমন হয় না। প্রজাদের এই সুখ শান্তি দেখে 'রাজা জটাধর দাস হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর নামে শিঙ্কর ভূ-সম্পত্তি দান করেন।
হযরত শাহরাস্তি (রহ)-এর আগমনের পূর্ব থেকেই এতদঞ্চলে কলেরা, বসন্ত, বিভিন্ন প্রকারের মহামারী দেখা দেয়। মানুষ এ সকল রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে, কিন্তু কোন ঔষধেই কাজ হয় না। দৈনিক শত শত লোক মৃত্যুর কোলে অকালে চলে যায়। অকালে ঝরে পড়ে অনেক প্রতিভাবান প্রাণ। মানুষ হয়ে যায় অতিষ্ট। ভগবান, ঠাকুর, মুর্তীর প্রতি ধর্না দিয়েও এ সকল রোগ বালাই থেকে মানুষের জীবন রক্ষা হইতেছে না। দিনে দিনে অবস্থার অবনতি হইতে থাকে।
হযরত
শাহরাস্তি (রহ.) তখন অত্র এলাকার জন্য নতুন
মানুষ। ইতিপূর্বেকার আরও দুই একটি ঘটনার কারণে, হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর কেরামতীর কারণে
মানুষের অর্ন্তনিহিত বিশ্বাস জন্ম হল তাঁর উপর। মানুষ আশ্বস্তবোধ করতে লাগলেন হযরত
শাহরাস্তি (রহ.)-এর নিকট গেলে হয়তঃ আমাদের এসব রোগ বালাই দূর হবে। আল্লাহ তাঁর দোয়া
কবুল করে আমাদেরকে রোগ মুক্ত করবেন। কিন্তু যাই কিভাবে?
সমস্যা
প্রকট ঐ ফকির মুসলমান আমাদের হিন্দু ধর্মের অনেক লোককে তাঁর ধর্মে দীক্ষা দিয়েছে।
যার কারণে দিন দিন আমাদের হিন্দু ধর্মের লোক কমে
যাইতেছে। এখন আবার যদি ঐ দরবেশের নিকট গিয়ে আমাদের রোগ মুক্তির জন্য দোয়া চাই। তাঁর
উছিলাতে যদি আমাদের রোগ মুক্ত হয় তাহলে বাকী যত হিন্দু আছে সকলেই মুসলমান হয়ে যাবে।
কি আর করি, করি অবস্থা।
এদিকে
মানুষের করুণ অবস্থা। যারা এই চিন্তা করছে তাদেরও মধ্যে দেখা গেল নিজ ভাই, বোন, ছেলে-মেয়ে,
স্ত্রী, সঙ্গী অথবা বাবা-মা একজন না একজন হয় মৃত্যুবরণ করছে, না হয় অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
কোন প্রকার কুল কিনারা না দেখে এলাকার সর্দারকে নিয়ে দলে দলে হযরত শাহরাস্তি (রহ.)
-এর নিকট আসতে লাগলেন। এক এক করে হিন্দুদের বিভিন্ন গোত্র, বর্ণ, বংশের লোকজন এসে হুজুর
হযরত শাহরাস্তি (রহ.) -কে অনুরোধ করল তাদের
জন্য এর একটা বিহিত ব্যবস্থা করার জন্য। এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এলাকার সর্বস্তরের
লোকজন হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর নিকট ধর্না
দিল।
হযরত শাহরাস্তি (রহ.) ইহাকে ইসলাম প্রচারের একটি কৌশল হিসাবে ব্যবহার করলেন। তিনি তাঁর প্রধান মুরীদকে ডেকে তার হাতে একটি লাঠি দিলেন ও বাহন হিসাবে একটি ঘোড়া দিয়ে বললেন যাও যে সকল এলাকায় কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড, যক্ষা এ সকল মহামারী আছে সে সব এলাকায় এই লাঠি ও ঘোড়া নিয়ে ঘুরে এসো।
তাঁর নির্দেশ পেয়ে তাঁর প্রধান শিষ্য একদিনে সর্বমোট ৪৫টি গ্রাম ঘুরে আসেন। আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর অশেষ মেহেরবাণীতে উক্ত ৪৫টি মৌজার মধ্যে কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড, যক্ষা রোগের মহামারী চলে গেল। পরের দিন হইতে মানুষ সুস্থতা বোধ করতে লাগলেন। কোথাও আর এসব রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে না। সকলের মনে আনন্দ। এই ঘটনার পরে থেকে দলে দলে হিন্দুদের ঠাকুর দেবতাসহ উচ্চবর্ণের হিন্দুগণ দলে দলে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) -এর নিকট বায়েত গ্রহণ করতে লাগলো। এই এলাকাতে কিছু সংখ্যক হিন্দু ব্যতীত প্রায় সকল সম্ভ্রান্ত, উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের হিন্দুগণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তাঁহার এই কাজ অব্যাহত ছিল।
এই মহান সাধক ৭৮১ বঙ্গাব্দে, ১৩৭৪ সালে ৭৭৫ হিজরী সনে একশত পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি চাঁদপুর জেলায় শাহরাস্তি উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে ওফাত লাভ করেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন।)
হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর ইন্তেকাল সম্পর্কে একটি জনশ্রুতি রহিয়াছে। মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্বে থেকেই হযরত শাহরাস্তি (রহ.) বর্তমানে যেখানে তাঁহার মাজার সেখানে গর্ত করে মুরাকাবা মোসাহেদা শুরু করেন। তাঁর মুরীদদের তিনি ডেকে বললেন, সেখান থেকে তিনি স্বেচ্ছায় উঠে না আসা পর্যন্ত যেনো তাকে ডেকে না আনা হয়। পীরের হুকুম কঠোর ভাবেই মুরীদগণ পালন করিতেন। তাই হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর এ নির্দেশ মুরীদগণ পালন করলেন। কেহই তাঁহার খোঁজ-খবর নিলেন না। এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল। তিনি যে চলে গেলেন আর ফিরে আসছেন না। মুরীদগণও হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর কথা অনুযায়ী তাঁহাকে ডাকলেন না। একদিন তাঁর এক মুরীদ স্বপ্নে দেখেন হুজুর আর বেঁচে নেই। সাথে সাথে তিনি অন্যদেরকে সাথে নিয়ে অকুস্থলে যান, দেখেন ঘটনা সত্য। হুজুর ইন্তেকাল করে মাটিতে শুয়ে আছেন। অবশেষে তাঁকে সেখানেই সমাধিস্থ করা হলো। এরপর এ সমাধি কেন্দ্রকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) মাজার।
জেলা শহর চাঁদপুর থেকে কুমিল্লাগামী সড়কপথে ৩.৫ কিলোমিটার পূর্বে এগুলেই শাহরাস্তি থানা। এখানেই শ্রীপুর গ্রামে নৈসর্গিক শোভায়সমৃদ্ধ দীঘির দক্ষিণ পাড়ে উঁচু টিলার উপর অবস্থিত শাহরাস্তির (রহ.) মাজার।
মজার ব্যাপার হলো, এ দীঘি খননের ইতিহাস বড়ই চমৎকার এবং আশ্চর্য হওয়ার মত। কথিত আছে যে, ৭শ' বছর পূর্বে ২৮ একরবিশিষ্ট এ দীঘিটি হযরত শাহরাস্তি (রহ.) জনস্বার্থে চতুর্দশ শতাব্দীতে খনন করেন। সকলে মনে করেন এ দীঘি খনন তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য কারামত। মাত্র এক রাতের মধ্যে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) তার শিষ্য, ভক্ত ও জ্বীনদের দ্বারা উক্ত দীঘি খনন করেন। বর্তমান কুমিল্লা জেলার নাম হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর একটি কথা থেকে হয়েছে।
এ ছাড়াও হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর নামের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এখানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নামকরণ করা হয়। যেমন: হাটরাস্তিগঞ্জ হতে শাহরাস্তি বাজার, শাহরাস্তি রেল স্টেশন, হযরত শাহরাস্তি (রহ.) জামে মসজিদ, মেহের অঞ্চল হতে শাহরাস্তি থানা, শাহরাস্তি উপজেলা, শাহরাস্তি পৌরসভা, শাহরাস্তি উচ্চ বিদ্যালয়।
সিঁড়ি বেয়ে অথবা পশ্চিম কি থেকে সরাসরি মাজারে প্রবেশ করা যায়। এক সাথে উত্তর-দক্ষিণ সারিতে ছয়টি কবর। পশ্চিম দিক থেকে গণনা করলে প্রথম ও দ্বিতীয় কবর দুটি শাহরাস্তি (রহ.)-এর আরবীয় দু'জন সঙ্গীর কবর। তৃতীয় কবরটি হযরত শাহরাস্তি (রহ.)-এর, চতুর্থ কবরটি তাঁর বড় ভাই হযরত শাহরাস্তি মাহবুব (রহ.) এর। পঞ্চম কবরটি শাহ মাহবুবের স্ত্রীর। ৬ষ্ঠ কবরটি হযরত গিয়াস (রহ.)-এর তিনি হযরত শাহ মাহবুবের ছেলে, উনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত হযরত শাহরাস্তি (রহ.) ও অন্যান্যের মাজারের চতুর্দিকে দেয়াল ছিল। স্থানীয় লোকজন বিংশ শতাব্দিতে মাজারের ছাদ, কবর পাকা ও আনুষঙ্গিক কারুকার্য সম্পাদন করেন।
0 Comments