Header Ads Widget

হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহ.)

 

 ইয়েমেনের গভর্নর মুয়াজ ইবনে জাবালের দুই পুত্র ও কন্যার মধ্যে সবার বড় ছিলেন মখদুম শাহদৌলা হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহ.)। ইসলাম প্রচারের কাজে পিতার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে।

১১৯২-৯৬ সালের মধ্যে ইয়েমেন থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমে তিনি উজবেকিস্তানের বোখরা শহরে প্রবেশ করেন। বোখরা শহরে হযরত জালালউদ্দিন বোখারী (রহ.) এর সান্নিধ্যে বেশ কিছু দিন তার দরবার শরীফে কাটানোর পর ১২৪০ সালে তিনি বাংলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বজরা নৌকা নিয়ে সফরে বের হয়ে ঘুরতে ঘুরতে পোতাজিয়া নামক স্থানে নোঙর ফেলেন। বর্ষা মৌসুমে আসেন তারা। সে সময় করতোয়ার খরস্রোতা রূপ দেখে অবাক হয়েছিলেন হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.)। ভরা বর্ষায় থই থই পানিতে ডুবে ছিল গোটা শাহাজাদপুর। একুল ওকুল দেখা দুষ্কর।

বোখরা শহরের জোড়া কবুতর এবার তাদের পথ দেখায়। হযরত জালালউদ্দিন বোখারীর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন এই এক জোড়া কবুতর। ছেড়ে দেওয়া হয় কবুতর মুক্ত আকাশে। ফিরে আসে কবুতর জোড়া শুকনো মাটি নিয়ে। বিচক্ষণ হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.) কবুতরকে অনুসরণ করতে বলেন। উড়ে যায় কবুতর দিগন্ত পানে, পিছে ছুটছে হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.)বজরা। করতোয়া নদীর তীরে দরগাহপাড়া এসে শেষ হয় পানির যাত্রা। মাটির স্পর্শ পেয়ে বাংলার জমিনে বুক ভরে শ্বাস নিলেন সুফী সাধক। যেন এ মাটি তার শেষ অবস্থান হবে বুঝে গিয়েছিলেন।

যেখানে বজরা থামে সেই নদীর পাড়ে তাবু টানিয়ে সাময়িকভাবে বসবাস শুরু করে হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.)ও তার সহচররা। এখান থেকেই তিনি ইসলাম প্রচারের কাজে লিপ্ত হন। দরগাহপাড়ায় যেখানে এখন মসজিদের অবস্থান, সেই স্থানেই হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.)ও তাঁর সহচরের দল ওস্তাদ হযরত শামসুদ্দিন তাবরেজী (রহ.) কে নিয়ে পাঞ্জেগানা নামাজ আদায় করতেন। ধীরে ধীরে এখানে গড়ে তোলেন মখদুমিয়া জামে মসজিদ।

;

এই মসজিদকে ঘিরেই তিনি ইসলাম প্রচার শুরু করলে তৎকালীন সুবা বিহারের অমুসলিম অধিপতি "রাজা বিক্রম কেশরী" হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.) আগমনে রাগান্বিত হয়ে তার সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। কিন্তু সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়ে ফিরে যায়। ইতিমধ্যে হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.) শাহজাদপুরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তার আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা এই অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করেন।

ইসলাম প্রচারে ঈশান্বিত হয়ে রাজা বিক্রম কিশোরী বাধা প্রদান করতে থাকলে সর্বমোট ৩৩বার হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা (রহ.) এর সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম দুটি যুদ্ধে বিক্রম কিশোরী পরাজিত হলে প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া হয়ে উঠে। পরে গুপ্তচর পাঠিয়ে ওই গুপ্তচর হযরত মখদুম শাহদ্দেীলা (রহ.) এর বিশ্বস্ত সহচরে পরিণত হয়ে একদিন একাকী অবস্থায় আসর নামাজ পড়ার সময় ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে গুপ্তচর দেহ থেকে গর্দান মোবারক বিছিন্ন করে শহীদ করেন। পরে তাঁর দ্বিখণ্ডিত মাথা সুবা বিহারের রাজা বিক্রম কিশোরীর নিকট নেয়া হলে সেখানেও জবান থেকে সোবহানা রাব্বিল আলা উচ্চারিত হতে থাকে। এই অলৈাকিক দৃশ্য দেখে সুবা বিহারের রাজাসহ অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দ্বিখণ্ডিত দেহ মোবারক এই মসজিদের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে দাফন করা হয়।

এর পরও থেমে থাকেনি ইসলাম প্রচারের কাজ। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি হযরত ইউসুফ শাহ (রহ.), হযরত শাহ হাবিবুল্লাহ (রহ.) ,হযরত শাহ বদর (রহ.), এবং ওস্তাদ হযরত শামসুদ্দিন তাবরিজি (রহ.)-এর প্রচেষ্টায় দিন দিন ইসলাম ব্যাপকভাবে বিস্তার করে। যার ফলে হিন্দুদের সংখ্যা কমে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীয়ন করা হয়। এজন্য অনেক ঈমানদার মুসলমানকে শহীদ হতে হয়। দরগাহপাড়ার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য শহীদের কবর রয়েছে। এমনকি এই মসজিদের দক্ষিণ কোণে শহীদদের গণকবর বা গঞ্জে শহীদান রয়েছে। পরে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা শহীদী রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করে এ অঞ্চলের শাসনভার অর্পিত হয় হযরত ইউসুফ শাহ (রহ.) এর ওপর। আর তার নামানুসারেই এ অঞ্চলকে ইউসুফ শাহ পরগনার অধীনে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীকালে (১৫০০-১৫৭৬) খ্রিষ্টাব্দে বাংলার মুসলিম সুলতানি আমলে এই মসজিদের নিদর্শন কাজ শুরু হয়। তৎকালীন মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম কারুকার্য ব্যবহার করা হয় এর নির্মাণে।

১৫ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের উত্তর-দক্ষিণের দৈর্ঘ্য ১৩.১৯ মিটার, পূর্ব-পশ্চিম প্রস্থ ১২.৬০ মিটার এবং ছাদের উপরিভাগের গম্বুজের ব্যাস ৩.০৮ মিটার। গম্বুজের প্রতিটি মাথা পিতলের কারুকার্যে মণ্ডিত।

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে হুরাসাগর নদীর পশ্চিম তীরে হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.) এর রওজা শরীফ অবস্থিত।

 

Post a Comment

0 Comments