
রাজশাহী
অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম প্রচারকারী মহান সাধক হযরত তুরকান শাহ (রহ.) ইরাকের
বাগদাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি
বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) এর বংশধর ছিলেন। মূলত তুরকান শাহের মাধ্যমেই
রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পূর্ণতা পায় শাহ মখদুম
রূপোশের মাধ্যমে। তুরকান শাহ ছিলেন শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.) এর অন্যতম প্রিয় শিষ্য।
তৎকালীন
সময়ে মহাকালগড় (রাজশাহী শহরের নাম ছিল ‘মহাকালগড়’। তবে পরে এ নাম রামপুর
বোয়ালিয়াতে রূপান্তরিত হয় ) এ ৩০/৪০ বিঘা জমির উপর দেও রাজার বাড়ী ছিল। রাজা
দেও এর প্রতিমুর্তি ও বহু মঠ-মন্দির পূর্ন ছিল। এখানে মহাকাল দীঘি নামে একটা
প্রকান্ড দীঘি ছিল।
তৎকালিন
দৈত্য ধর্মালম্বিদিগের প্রধান তীর্থ স্থান ছিল এ রামপুর বোয়ালিয়া। রামপুর বোয়ালিয়া
( বর্তমানে দরগাপাড়া নামে পরিচিত) কে পূর্বে মহাকালগড় বলা হত। তাদের ধর্মমতে
এখানে এসে নরবলি দিত। অনেক সময় লোক মানূষ খরিদ করে আনত। কখনও আবার জোর করে ধরে
আনত। অনেকে আবার আসত স্বেচ্ছায়। কাহারও সন্তান না হলে মানত করত যে সন্তান
হলে একট বলি দেবে।
এখানে
দু’জন দেওরাজা ছিল তাদেরকে মানুষ ঈশ্বরের অবতার বলে বিশ্বাস করত। কোন
মুসলমান এ অঞ্চলে আসলে তাদেরকে ধরে বলি দেওয়া হয়।
এ
সংবাদ হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.) এর নিকট পৌছালে তিনি নোয়াখালী
অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে যাওয়ার আগে তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারী হযরত তুরকান
শাহ (রহ.) এবং কতিপয় শিষ্যকে মহাকালগড় তথা বর্তমান রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম
প্রচারের দায়িত্ব প্রদান করেন।
হযরত
তুরকান শাহ (রহ.) এর নেতৃত্বে একদল রামপুর বোয়ালিয়ায় পৌছলে এবং ধর্ম প্রচার
শুরু করলে দেও রাজের সাথে সংঘর্ষ বাধে এবং তুরকান শাহ তাঁর হাতের লাঠি দ্বারা বহু
দেও ধর্মালম্বির প্রাণ নাশ করেন।ফলে জীবন্ত অবস্থায় তাঁকে বেধেঁ আনার আদেশ হয়।
রাত্রিকালে এ ফকিরকে বেধেঁ ফেলা হয়।
কিন্তু
শত শত লোক চেষ্টা করেও হযরত তুরকান শাহকে তাঁর গদী হতে সরাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত
ঐ স্থানেই তাঁকে ৬৭৭ হিঃ সনে হত্যা করা হয়। কিন্তু লাশ হস্তী লাগিয়ে বিন্দু মাত্র
স্থানান্তর করতে না পেরে ঐ স্থানেই তাকে পুঁতে রাখা হয়।
আজও
উক্ত স্থান বর্তমানে দরগাপাড়ায় হযরত তুরকান শাহ (রহ.) এর রওজা তুরকান শহীদের
আস্তানা নামে খ্যাত।
রামপুর
বোয়ালিয়ায় হযরত তুরকান শাহ (রহ.) এর শহীদ হওয়ার সংবাদ শুনে হযরত শাহ
মখদুম (রহ.) দানবকুলকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য এখানে আসেন। তিনি কিছু সঙ্গী সহ নদী
পথে কুমীরের পিঠে চড়ে এসে চারঘাট থানার বাঘা নামক স্থানে উপস্থিত হয়ে পদ্মা নদীর
তীরে কেল্লা স্থাপন করেন এবং উক্ত স্থানই মখদুম নগর নামে পরিচিত। তাঁর নির্মিত
মখদুম নগরের এ দুর্গ থেকে তিনি অভিযান চালিয়ে মহাকালগড় দেও রাজ্য জয় করেন।
আধ্যাতিক শক্তি বলে তিনি যাদুকুন্ড ধবংশ করেন। এখান থেকে দেও রাজার বিরুদ্ধে অভিযান
পরিচালনা করেন। এবং এ যুদ্ধে তিনি জয় লাভ করেন।
0 Comments