হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী(রহ.) ছোট বেলা
থেকেই ইসলাম প্রচার ও প্রসারের সাথে জড়িত থেকে সুফীবাদের দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন।
তিনি অবিভক্ত ভারত-বাংলার অন্যতম ধর্মীয় প্রচারক তৎকালীন কোলকাতার মেহেদীবাগ দরবার
শরীফের পীর আওলাদে রাসুল হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী (রহ.) এর নিকট গিয়ে বায়েত গ্রহন
করেন এবং সুদীর্ঘ ১২ বছর তাঁর মুর্শিদের দরবারে থেকে সাধনা করার পর ১৮ বছর বয়সে
তিনি নকশবন্দীয়া তরীকার খেলাফত লাভ করেন। হযরত খাজা ওয়াজেদ আলী (রহ.) তাঁকে খাজা
উপাধিতে ভূষিত করেন এবং নিজে দেশে গিয়ে নকশবন্দীয়া তরীকার প্রচারের জন্য আদেশ করেন।
এরপর নিজ মুর্শিদের নির্দেশে নিজ এলাকায় ফিরে এসে
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন এবং এখান থেকেই তিনি হযরত
রাসূল এর শান্তির ধর্ম নকশবন্দীয়া তরীকার তরিকা প্রচার প্রসার শুরু করেন। সেখানেই
তিনি বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। জনক হন ৮ কন্যা এবং ৫ পুত্র সন্তানের।
সমগ্র বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের আসামে সফর করে
তিনি ইসলাম ও সুফীবাদ প্রচার কাজ তরান্বিত করেন। তাঁর অনুসারীদের পরামর্শক্রমে
এনায়েতপুর দরবারে ১৯১৫ সাল থেকে শুরু করেন ওরশ শরীফ। এতে সাড়া দেশ থেকেই তার
ভক্ত মুরিদরা এখানে সমবেত হতে থাকেন। যা ধীরে-ধীরে অগণিত ভক্তদের আগমনে মহাসমাবেশে
রুপ নেয়।
তাঁর সংস্পর্শে এসে অনেকেই সূফী সাধক এবং আল্লাহর
অলীতে পরিনত হয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত খলিফাগণের মধ্যে ফরিদপুরের সদরপুরের প্রখ্যাত
আটরশি পীর, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ পীর, টাঙ্গাইল প্যারাডাইস পাড়া, কুমিল্লার ইসলামাবাদ,
মাতুয়াইল, জামালপুরের সাধুরপাড়া মোসলেম নগর, যশোরের ঘুনী দরবার শরীফ, ভারতের
আসামের মেহেদীবাগ গণি খলিফার দরবার শরীফের পীর অন্যতম।
তাঁর খিলাফতে লাভ করে যিনি পরবর্তীতে জগৎ বিখ্যাত
হন, তিনি হলেন সুলতানীয়া মোজাদ্দেদ তরীকার ইমাম হযরত সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ
চন্দ্রপুরী (রহ.)। যিনি চন্দ্রপুরী হুজুর নামে পরিচিত।
তিনি ইসলামের মর্মবাণী-তরিকত দর্শন প্রচারের
পাশাপাশি সমাজসেবা মুলক কাজেও রেখেছিলেন অনন্য অবদান। একজন পরিপূর্ণ মানবতাবাদী
হিসেবে তিনি সারাটা জীবন অসহায় দুঃখী মানুষদের নিজের হাতে সহযোগীতা করে গেছেন।
বাংলা ১৩৫৪ সনে নিজ দরবারে বিনামুল্যে চিকিৎসার জন্য “খাজা দাতব্য চিকিৎসালয়” নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেন।
বিনা পয়সায় সেবা দিয়ে যাওয়া আধুনিক চিকিৎসার এই প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশ থেকে
আগত লাখো জাকের ও এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে যা বর্তমানে ৭০ বছর পার
করেছে।
আল্লাহর এই মহান আউলিয়া বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮
ফাল্গুন, ইংরেজি ১৯৫২ সালের ২মার্চ, রবিবার নিজ বাসস্থানে ওয়াত লাভ করেন।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরেই তাঁর রওজা শরীফ অবস্থিত।
0 Comments