সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) এর রওজা শরীফ
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান হলেন খাতুনে জান্নাত নবি নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রা.) ও শেরে খোদা হযরত আলী
কার্-রামুল্লাহ ওয়াজহাহু এর কনিষ্ঠ পুত্র সাইয়্যেদেনা ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ২১তম
বংশধর ৷
ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, সূফী
সম্রাট হুজুর কেবলাজানের উর্ধ্বতন ১৫তম পুরুষ হযরত সৈয়দ দোস্ত মাহমুদ সিপাহী (রহ.
) তুর্কী শাসকদের সাথে ভারতবর্ষে এসে বাংলাদেশে আগমন করেন এবং ইসলাম প্রচারের
লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে
বসবাস শুরু করেন I
হযরত সৈয়দ দোস্ত মাহমুদ সিপাহী (রহ. )-থেকে শুরু
করে বংশ পরম্পরায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শ্রদ্ধেয় দাদাজান হযরত সৈয়দ
আবদুর রফিক (রহ.) হলেন ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বংশের ১৯তম পুরুষ ৷ হযরত সৈয়দ আবদুর
রফিক (রহ.)-এব জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট সুফিসাধক আলহাজ হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার
(রহ.), তিনি হলেন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সৌভাগ্যবান পরম শ্রদ্ধেয় পিতা I
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের মহীয়সী মাতা হলেন হযরত জোবেদা খাতুন (রহ.) মাতৃকুল
ও পিতৃকুল উভয় দিক থেকে অলী-আল্লাহ্গণের পবিত্র রক্তের স্রোতধারা সুফী সম্রাট
হযরত দেওয়ানবাগী (মা.আ.) হুজুর কেবলাজানের মাঝে প্ৰবাহমান I
মহান রাব্বুল আলামিন যখন তাঁর প্রিয় বন্ধুদেরকে
জগতের বুকে প্রেরণ করেন, তখন তাঁদের শুভ জন্মের পূ্র্বাভাস হিসেবে বিভিন্ন অলৌকিক
ঘটনা সংঘটিত করে থাকেন I ঐ সকল ঘটনা প্রমাণ করে যে, যিনি পৃথিবীতে আসবেন, তিনি সাধারণ
কোনো মানুষ নন I সূফী সম্রট হুজুর কেবলাজানের আগমনের পুর্বেও বহু অলৌকিক ঘটনা
সংঘটিত হয় I তাঁর পিতা আলহাজ্ব হযরত আবদুর রশিদ সরকার (রহ. ) ছিলেন স্বনামধন্য
ব্যবসায়ী I ফলে ব্যবসায়িক কাজে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গমন করতেন I সে সময়
বহু মাজ্জুব ও দেশরক্ষক অলি আল্লাহর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে I তাঁরা সূফী সম্রাট
হুজুর কেবলাজানের পিতাকে প্রায়শই বলতেন “সরকার সাহেব!
আপনি হলেন একজন সৌভাপ্যবান পিতা ৷ আপনার ঔরসে এমন
একজন সন্তান জন্ম হবে, যাঁর মাধ্যমে পাপের আঁধারে নিমজ্জিত এই মানবজাতি হেদায়েতের
আলোর পথের সন্ধান লাভ করবে I”
এছাড়া সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান যখন মাতৃগর্তে,
তখন তাঁর মহীয়সী মাতা হযরত জোবেদা খাতুন (রহ. ) বিভিন্ন স্বপ্ন ও ঘটনার মাধ্যমে
বুঝতে পারেন যে, তাঁর গর্ভের শিশু সস্তানটি মানবজাতির জন্য বরকতময় হিসেবে এই
ধুলির ধরার আসবেন I একদা তিনি শেষ রাতে রহমতের সময় তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের
জন্য অজু করতে যখন ঘর থেকে বাহিরে পা বাড়ালেন, তখন তিনি লক্ষ্য করলেন আকাশে নতুন
একটি তারার উদয় হয়েছে I আর সেই তারাটিকে কেন্দ্র করে সমগ্র আকাশ জুড়ে অসংখ্য
তারার মেলা বসেছে I নতুন তারাটি ভুপৃষ্ঠের এতো কাছাকাছি মনে হচ্ছিল যে, তারাটি যেন
কিছু বলার জন্য এগিয়ে এসেছে এবং অন্যান্য সকল তারা স্বীয় আলোকরশ্মি দিয়ে সুফী
সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সম্মানিত মাতাকে অভিবাদন জানাচ্ছে I এই দৃশ্যটি অবলোকন
করে হযরত জোবেদা খাতুন (রহ.) বুঝতে পারলেন যে, তাঁর গর্ভের শিশু সস্তানটি জগতবাসীর
জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে আগমন করবেন ৷
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জন্মের পূর্ব রাতে
তাঁর মাতা হযরত জোবেদা খাতুন (রহ. ) স্বপ্নে দেখেন “আকাশে ঈদের চাঁদ উদিত হয়েছে ৷
গ্রামবাসী সকলে ঘর থেকে বের হয়ে মহানন্দে ঈদের চাঁদ দেখছেন I ঐ চাঁদ দেখার জন্য
তিনিও ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন ৷ যখনই তিনি অপলক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালেন,
সাথে সাথে আকাশের চাঁদটি তাঁর কোলে নেমে আসে I তিনি ঈদের চাঁদ কোলে পেয়ে আনন্দে
আত্মহারা হয়ে যান I” এরপর তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায় ৷ তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর পরম
কাঙ্ক্ষিত সৌভাগ্যবান সস্তানটির জগতের বুকে আসার সময় হয়ে গেছে I সেদিনই সকাল
১০টায় মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম সূফী সম্রাট হযরত
দেওয়ানবাগী (মা.আ.) হুজুর কেবলাজান আপন পিত্রালয়ে জগতের বুকে তশরিফ আনেন ৷
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজানের অগ্ৰজ ৫ ভাই ও অনুজ ২ বোন, অর্থাৎ আলহাজ হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ
সরকার (রহ.) ও হযরত সৈয়দা জোবেদা খাতুন (রহ.)-এর ৬ পুত্র সন্তান ও ২ কন্যা সন্তান
৷
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জন্মের ৭ম দিবসে
তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় দাদাজান হযরত সৈয়দ আবদুর রফিক (রহ. ) প্রিয় নাতির আকিকার
অনুষ্ঠান মহা ধুমধামের সাথে আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ৷ এই লক্ষ্যে
তিনি আকিকার অনুষ্ঠানের আগের দিন এক ওয়াজ মাহ্ফিলের আয়োজন করেন I মাহ্ফিলে
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ফখরে বাংলা
মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেব I আসর নামাজের পর থেকে মাহ্ফিল শুরু হয়ে মধ্যরাত
পর্যন্ত চলে I পরদিন সকালে মহা ধুমধামের সাথে আকিকার অনুষ্ঠান শুরু হয় I এই সময়
হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ.) বাড়ির অন্দর মহল থেকে তাঁর নবজাত পুত্র সূফী
সম্রাটকে কোলে করে বাড়ির মেহমান খানায় নিয়ে আসেন I মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেব অপূর্ব
সুন্দর জ্যোতির্ময় শিশুটিকে দেখে সাথে সাথে কোলে তুলে নিলেন এবং আনন্দের সাথে বলে
ঊঠলেন, “মাশাআল্লাহ্ মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর শিশু তো I সরকার সাহেব আপনার
প্রশংসা না করে উপায় নেই , কারণ সত্যিই আপনি একজন সৌভাগ্যবান পিতা ! আমি দোয়া
করি, আপনার এই সন্তান যেন আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়”! অতঃপর হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ
সরকার (রহ. ) মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেবকে নবজাত পুত্রের নাম রাখার জন্য অনুরোধ
করেন I মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেব কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন- “আপনার এই পুত্রের
নাম বাংলায় ‘মাহবুব-এ-খোদা’ অর্থাৎ খোদার প্রিয় ৷ সত্যিই অসাধারণ চারিত্রিক
গুণাবলি ও মাধুর্যের কারণে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জীবনে এই নামের পরম
সার্থকতা প্রকাশ পায় ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শুভ
জন্মের পর তাঁর পিতা হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ. ) ব্যবসায় প্রচুর লাভ করেন,
যা পূর্বের বছরগুলো থেকে ছিল সর্বপেক্ষা বেশি I সেই লাভের টাকা দিয়ে তিনি অনেক
জমি ক্রয় করেন এবং গরিব দুঃখী মানুষকে সহায়তা করেন I
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজানের শিক্ষা জীবন শুরু হয় মাত্র ৩ বছর বয়সে। বাড়ির মক্তবে পবিত্র কুরআন শিক্ষার
চর্চা শুরু করেন ৷ অসাধারণ স্মরণশক্তি, সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর ও অদম্য ম্পৃহার কারণে
মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই শিশু সূফী সম্রাট কায়েদা, আমপাড়া-সহ পবিত্র কুরআন পাঠ
সম্পন্ন করেন ৷ এই অল্প বয়সেই তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বহু আরবি, ফারসি ও
উর্দু কিতাব মুখস্থ করেন , অতঃপর ৫ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রাম সোহাগপুর
প্রইিমারি স্কুলে ভর্তি হন ৷ কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে নায়েবে
রাসূল হওয়ার দীপ্ত বাসনা নিয়ে তিনি আরবি ও ইসলামিক বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের
জন্য তদানীন্তন বিখ্যাত তালশহর করিমিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন । তিনি শিক্ষা
জীবনের প্রতিটি স্তরে অসাধারণ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন ৷ তিনি বৃত্তি সহকারে
মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন I একজন মেধাবী, উদারমনা ও পরোপকারী
হিসেবে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ছাত্র-শিক্ষক সকলের নিকট আস্থা ও বিশ্বস্ততার
এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন ৷ তাঁর মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্ব ও আকর্ষণীয় নেতৃত্বের কারণে
ছাত্র জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি মাদ্রাসা ছাত্র সংসদের ডিপি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন
৷
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সূফী সম্রাট হুজুর
কেবলাজানের অবদান চির ভাস্বর হয়ে আছে I বাঙালি জাতির চরম সংকটময় মুহূর্তে
তৎকালীন আলেম সমাজের বেশিরভাগ যখন নির্লজ্জভাবে পশ্চিম পাকিস্তানিদের পক্ষ নিল,
ঠিক তখনই দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য মাত্র ২২ বছরের তরুণ
আলেম সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল রবিবার স্বাধীনতাকামী ৭২জন
সঙ্গী সাথিদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় স্থাপিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধা
ক্যাম্পে যোগ দেন ৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কয়েক নাম তিনি প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে
৩নং সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর
তত্ত্বন্বধানে বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার
সাথে যুদ্ধ করেন এবং পরবর্তীকালে তিনি ভারতের হেজামারায় অবস্থিত ৩নং সেক্টর
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন I সে
সময় তিনি ভারতে দু’টি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন ৷
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)
হুজুর কেবলাজান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হেজামারা ক্যাম্পে ১৯ নভেম্বর ঈদুল ফিতরের
নামাজে ইমামতি করেন এবং খুৎবা দিতে গিয়ে তিনি সমবেত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে
আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন-“আপনারা সাক্ষী থাকুন I আল্লাহর কসম ! আগামী বকরা ঈদের আগে
দেশ স্বাধীন হবে । আমি আপনাদের নিয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করব
৷” মহান আল্লাহর অপার দয়ায় তার পবিত্র মুখ থেকে উৎসারিত এই ঐতিহাসিক
ভবিষ্যদ্বাণীর মাত্র ২৭ দিন পর, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে
চুড়ান্ত বিজয় লাভ করে এবং তিনি ঢাকার তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতি
করেন I সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান প্রদত্ত বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী এবং তা
বাস্তবায়েনের ঘটনাটি পরবর্তীতে বিভিন্ন মুক্তিযাদ্ধোরা তাদের লিখিত গ্রন্থ ও
বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন I
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যুগের ইমাম সূফী সম্রাট
হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান নবগঠিত ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ধর্মীয়
শিক্ষক পদে যোগদান করেন ৷ তদানীন্তন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টে
ধর্মীয় শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকারী এবং আলেমগনের মধ্যে তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয়
৷ সেসময় তিনি পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরিফের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন এবং নিয়মিত
তাফসির মাহফিল করে একজন প্রজ্ঞাবান মুফাসসিরে কুরআন হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন ।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান ১৯৭৪ সালে জয়দেবপুরের শহর কুতুবের মাধ্যমে তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ
অলী-আল্লাহ্ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর পরিচয় লাভ করেন এবং তাঁর
নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন ৷
১৯৭৪ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি, রবিবার বাৎসরিক ওরশ
শরিফে অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্যে ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়ায় তার মোর্শেদের দরবারে গমন
করেন I
সেসময় ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)
প্রথম দর্শনেই বুঝতে পারেন যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর সুযোগ্য
উত্তরসূরি, যাঁর প্রতীক্ষায় তিনি দির্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন । তাই ইমাম হুজুর
তাঁর পরম কাজ্জিত এই মহামানবকে কাছে রাখার অভিপ্রায়ে ১৯৭৪ সালের ১৬ মার্চ নিজ 8
র্থ কন্যা কুতুবুল আকতার সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-কে সূফী সম্রাট হুজুর
কেবলাজানের সাথে বিবাহ দেন I অতঃপর ১৯৭৫ সালে সূফী সম্রাট তাঁর মুর্শেদ ইমাম
হুজুরের নির্দেশে সেনাবাহিনীর চাকরি ইস্তফা দিয়ে আপন মুর্শেদের দরবার শরীফে চলে
আসেন ৷ ইমাম হুজুর তাঁর তরিকা প্রচার ও দরবার শরীফ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে
সূফী সম্রাটকে প্রধান খলিফা নিযুক্ত করেন ৷ সে সময় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান
গভীর সাধনার আত্মনিয়োগ করেন এবং আধ্যাত্মিক জগতের উচ্চতর মাকাম হাসিল করেন ৷
চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের প্রধান খলিফা ও ওলামা মিশনের প্রধান হিসেবে তরিকা
প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ওয়াজ মাহফিল করেন, সেসময়
সেখানে প্রায়ই নানা অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হতো ৷ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের
বক্তব্যের সময় অবারিত ফায়েজ বর্ষিত হতো ৷ তাঁর আলোচনা মানুষ মস্ত্রমুগ্ধ হয়ে
শুনতেন এবং দলে দলে তরিকা গ্রহণ করতেন ৷ এমনকি বহু অমুসলিম তাঁর সাহচর্যে এসে
ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন ৷
সূফী সম্রটি হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর
কেবলাজান ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কার দূর করে ধর্ম পালনের সঠিক পথ নির্দেশনা
দিতে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ সালে পরম করুণাময় রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে জামানার
মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের দায়িত্ব লাভ করেন ৷ ২8 আগস্ট, ১৯৮৮ সালে তিনি যুগের
ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন ৷ মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ জগতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা
করার লক্ষ্যে ৫ এপ্রিল, ১৯৮৯ সালে বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) সূফী সম্রাট হুজুর
কেবলাজানকে ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে ভূষিত করেন । অতঃপর ২
অক্টোবর, ১৯৯৬ সালে তিনি সকল ধর্মাবলম্বীদের পথপ্রদর্শক হিসেবে, হযরত ইব্রাহীম
(আ.) কর্তৃক সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত প্রাপ্ত হন I
পরিশেষে মহান আল্লাহ প্রকৃত স্বরূপ- ‘তিনি নিরাকার
নন, তাঁর নূরের রূপ আছে' এই মহা সত্যটি পবিত্র কুরআন ও মারফু হাদিসের আলোকে
মানবজাতির নিকট প্রকাশ করার পুরস্কারস্বরূপ মহান রাববুল আলামিন ১০ অক্টোবর, ২০০৮
খ্রিস্টাব্দ থেকে অদ্যাবধি পূণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্ৰতিচ্ছবি
দেখিয়ে যাচ্ছেন ৷
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান তাঁর মোর্শেদের দরবারে থাকাকালীন সময়ে তরিকা প্রচারের পাশাপাশি কিছু
গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণ ও সেবামুলক কাজও করেন। তিনি ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়ায় ১৯৮০
সালে একটি মাদ্রাসা ও একটি এতিমখানা এবং ১৯৮২ সালে একটি হাই স্কুল, একটি হাসপাতাল
ও একটি ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করেন ৷ সেই বছরই তিনি চন্দ্রপাড়ায় মানুষের যাতায়াতের
সুবিধার্থে এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন করে, সেখানে বিদ্যুতায়নের সুব্যবস্থা করেন ৷
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান তাঁর মোর্শেদের ওফাতের পর ঢাকায় এসে তিনি ইসলামী গবেষণার লক্ষ্যে ঢাকায়
১৯৮৩ সালে সুলতানিয়া মোজাদ্দেদীয়া গবেষণাগার, ১৯৯২ সালে সূফী ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ
এবং ১৯৯৮ সালে আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন I
এছাড়াও তিনি ১৯৮৫ সালে রাজধানী ঢাকায় ১৫8
আরামবাগে ’মোহাম্মদী ইসলামের’ অস্থায়ী প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ৷ ঐ বছরই
তিনি নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগে ‘বাবে জান্নাত’ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন ৷
পরবর্তীতে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের কমলাপুরে ১৯৮৭ সালে ‘বাবে মদীনা’ প্রতিষ্ঠা
করেন ।
কুল-কায়েনাতের রহমত হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর
রেখে যাওয়া শান্তি ও মুক্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ বিশ্বময় প্রচারের
লক্ষ্যে যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ১৪৭ আরামবাগে ১৯৯২ সালে ‘বাবে রহমত
ভবন’ প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে তিনি ১৫8 আরামবাগ থেকে মোহাম্মদী ইসলামের অস্থায়ী
প্রধান কার্যালয় স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করেন ৷ এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরে ১৯৯৫
সালে ‘বাবে নাজাত’ , ময়মনসিংহের ত্রিশালে ১৯৯৮ সালে ‘বাবে বরকত’ প্রতিষ্ঠা করেন I
অতঃপর ক্রমবর্ধমান আশেকে রাসুলদের জোয়ারের সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে ২০০৬ সালে
চুয়াডঙ্গোয় ‘বাবে নিয়ামত’ , ২০০৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ‘বাবে মোর্শেদ’, ২০০৯
সালে ঢাকার মগবাজারে ‘বাবে ফেরদৌস’ এবং ২০১০ সালে চট্টগ্রামে ‘বাবে মাগফিরাত’ ও গাজীপুরে
‘বাবে জান্নাতুল মাওয়া’ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন I সর্বশেষে তিনি ২০১১ সালে
রাজশাহীতে ‘বাবে নূর’ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন ৷ এভাবে সারা বাংলাদেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা প্রচারের জন্য সর্বমোট ১১টি দরবার শরীফ
প্রতিষ্ঠা করেন ৷
এছাড়া তিনি সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান,
মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার, জাপান, সুইডেন, ইতালি, গ্রিস,
সাইপ্রাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর
শতাধিক দেশে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শত শত খানকায়ে মাহ্বুবীয়া ও আশেকে
রাসূল জাকের মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন I এছাড়াও তিনি বহির্বিশ্বে মোহাম্মদী ইসলামের
সুমহান আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে World Ashek-e-Rasul Organization প্রতিষ্ঠা
করেন ।
মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনজীবনদানকারী,
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান কুল-কায়েনাতের রহমত, বিশ্বনবী
হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর রেখে যাওয়া শান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করেছেন।
এই জগতের পাপীতাপী মানুষগুলো যেন খুব সহজেই
আল্লাহ্ ও রাসূলের পরিচয় লাভ করতে পারে এজন্য তিনি চারটি শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো হল
১) আত্মশুদ্ধি ২) দিলজিন্দা ৩) নামাজে হুজুরী এবং ৪) আশেকে রাসূল হওয়া ।
আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরীর এ শিক্ষাই ছিলো মুসলিম জাতির আদি পিতা বাবা হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও হযরত মুসা (আ.) সহ সকল আম্বিয়া কেরামের৷ যুগ পরিক্রমায় আল্লাহর মনোনীত মহামানবগণ নিজ নিজ অনুসারীদেরকে এ উত্তম শিক্ষা দিয়েই তাদেরকে চরিত্রবানরূপে গড়ে তুলেছেন I বিষয়টি অশেষ দয়াময় আল্লাহ্ স্বীয় পাক জবানেই সুস্পষ্ট করেছেন, এরশাদ হচ্ছে-
অর্থাৎ - “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে
আত্মশুদ্ধি লাভ করে, এবং সে স্বীয় প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামাজ আদায় করে ৷
বস্তুত তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও, অথচ আখিরাত বহু গুণে শ্রেয় ও
চিরস্থায়ী। আর এটিই লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে ইব্রাহীম (আ.) ও মূসা
(আ.)-এর ওহীর কিতাবসমূহে I” (সূরা-আল আ‘লা-৮৭ - আয়াত-১৪ থেকে ১৯) ।
আর এই সূরা প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
(রা…) বলেন- অর্থাৎ - “যখন সূরা-আল আ‘লা তথা ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা’ নাযিল
হলো, তখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন- এই পুরো সূরাটিই ইব্রাহীম (আ.) ও মুসা
(আ.)-এর সহীফার মধ্যে ছিলো I” (তাফসীরে ইবনে কাহীর-8র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৭০৫)
এবং সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুৱ
কেবলাজানের চতুর্থ এবং সর্বশেষ শিক্ষা হচ্ছে-আশেকে রাসুল হওয়া। অর্থাৎ
কুল-কায়েনাতের রহমত বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রেম মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি
করে দিয়ে তাদেরকে আশেকে রাসুল হিসেবে গড়ে তোলা I আশেকে রাসূল হওয়া ব্যতীত হযরত
রাসুল (সা.) এর সুপারিশ লাভ করা এবং নিজের আত্মার মুক্তির কোন বিকল্প রাস্তা নেই।
রাসূল (সা.)কে ভালবাসার প্রয়োজন সম্পর্কে পবিত্র
কুরআনে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন-অর্থাৎ - “হে মাহবুব (সা.) I আপনি বলে দিন, তোমরা
যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো ৷ তাহলে আল্লাহ তোমাদের
ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন I অবশ্যই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও
পরম দয়াময় ৷” (সূরা-আলে ইমরান-৩ -আয়াত-৩১)
এই আয়াতের ব্যখ্যায় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এরশাদ
করেন- অর্থাৎ -“যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা
আমাকে বেশি ভাল না বাসবে, সে মু’মিন হতে পারবে না I” (বোখারী শরীফ-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭:
এবং মুসলিম শরীফ-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৯)
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান
যেহেতু হযরত রাসূল (সঃ) এর সিরাজুম্মুনিরার ধারক ও বাহক সেহেতু তাঁর নিকটে কোন
ব্যক্তি গেলে তিনি প্রথমেই তাঁর শাহাদত আঙ্গুলির মাধ্যমে এই ব্যক্তিটির ক্বালব বা
রুহের মধ্যে সিরাজুম্মনিরার নূরকে প্রবেশ করিয়ে তার সুপ্ত রুহু বা দিলকে জাগ্রত
(আল্লাহ্ আল্লাহ্ জ্বিকির) করে দিতেন। এরপর তিনি একটি ওয়াজিফা বা নির্দেশিকা দেন
যার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ দিলে বা হুজুরী দিলে নামাজ আদায়, মোরাকাবার মাধ্যমে
দিলজিন্দা এবং আল্লাহ্ ও রাসূলের দিদার লাভ করা যায় এবং ঘরে ঘরে আশেকে রাসূল (সঃ)
মিলাদের মাধ্যমে রাসূলের দর্শন লাভ করে আশেকে রাসূল হওয়া যায়। তাঁর শিক্ষা ও
পরামর্শ বা নির্দেশসমুহ পালন করে অসংখ্য ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং রাসূল (সঃ) এর দর্শন
লাভ করেছেন,আশেকে রাসূল হয়েছেন। তিনি এলমে তাসাউফের সর্বোচ্চ মাকামে উন্নীত হবার
লক্ষে সকল সবক শিক্ষা দিতেন ৷
সেইসাথে মানুষেরা তাদের হায়াতে জিন্দেগী শেষে
ঈমানী পরীক্ষায় যেন উত্তীর্ণ হতে পারে, সে উদ্দেশ্যে তিনি তাদেরকে আল্লাহর
পরিচয়, হযরত রাসূল (সা.)-এর পরিচয় লাভ করার পদ্ধতি শিক্ষাও দিতেন।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান
আল্লাহর পক্ষ থেকে জামানার মোজাদ্দেদ হিসেবে প্রেরিত হওয়ার কারণে, তিনি ইসলাম
ধর্মে অনুপ্রবেশ করা অসংখ্য কুসংস্কার সংশোধন করে হযরত রাসূল (সা.) -এর প্রকৃত
ধর্ম মোহাম্মাদী ইসলাম সমাজে তুলে ধরেছেন I তাঁর সংস্কারগুলো দেশে ও বিদেশে
বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর অসংখ্য ধর্মীয় সংস্কার করেছেন যার মধ্যে কিছু
সংখ্যক বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক সংসদে গ্রেজেট আকারে পাশ হয়েছে।
তাঁর
অসংখ্য সংস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজানের অসংখ্য ধর্মীয় সংস্কারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কার হচ্ছে- অশেষ
দয়াময় আল্লাহ্ নিরাকার নন; তাঁর অপরূপ সুন্দর নূরের সুরত আছে I
আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে-‘মহান আল্লাহ্ নিরাকার,
তাঁকে দেখা যায় না I’ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান সমাজে
প্রচলিত এ ধারণা পবিত্র কুরআন ও হাদীস দ্বারা ভূল প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেছেন-আসলে
মহান আল্লাহ্ নিরাকার নন; তাঁর অপরূপ সুন্দর নূরের সুরত আছে ৷ সাধনা-রিয়াযতের
মাধ্যমে আল্লাহ্কে এ দুনিয়ার জীবনে দেখা যায় । তিনি আরও বলেছেন- ‘পৃথিবীতে আগত
সকল নবী ও রাসূল আল্লাহ কে দেখেছেন, তাঁরা আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছেন, তাঁদের কিছু
সংখ্যক সরাসরি আল্লাহর সাথে কথাও বলেছেন I নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে তরীকার
ইমামগণ, মাজহাবের ইমামগণ মহান আল্লাহ কে দেখেছেন, তাঁর পরিচয় লাভ করেছেন, এমনকি
তাঁদের কেউ কেউ আল্লাহর সাথে কথাও বলেন . আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি ৷'
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন-‘আমি আমার মহান মালিক
আল্লাহ কে দেখেছি . মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে যতবার তাঁর দীদার দ্বারা
ধন্য করেছেন, আমি ততবারই দেখেছি… ‘আল্লাহ নিরাকার নন; তিনি অপরূপ সুন্দর নূরের
সুরতে স্বরূপে বিদ্যমান I’
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর
কেবলাজান তিনি সুমহান আল্লাহকে যে রূপে দেখেছেন, ওহীর বাণী আল কুরআন থেকে সে রূপের
বর্ণনা খুঁজে বের করে আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয়ের উপর বিষয়ভিত্তিক তাফসীর
‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয়-১ম খণ্ড’ এবং ‘তাফসীরে
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী আল্লাহর গুণবাচক নামের পরিচয়-২য় খণ্ড থেকে ৮ম খণ্ড’
পর্যন্ত তাফসীর প্রণয়ন করেন I এ তাফসীর শরীফ মুসলিম বিশ্বের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে
পূর্ণতা দানকারী ও নজিরবিহীন একমাত্র তাফসীর, যে তাফসীর শরীফে আল্লাহর আকারের
বর্ণনা, তাঁর অপরূপ সুন্দর নূরের রূপের বর্ণনা তাফসীর প্রণেতার প্রত্যক্ষ দর্শন
থেকে যেমন উপস্থাপিত হয়েছে, তেমনি মহিমাম্বিত আল্লাহর আসমাউল হুসনা তথা সুন্দর
সুন্দর গুণবাচক নামের মহিমা উপস্থাপন করে প্রমাণ করা হয়েছে- মহান আল্লাহ্
সর্বগুণের আধার, তাঁর নূরের রূপ আছে; তিনি নিরাকার নন I
২। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে- ‘হযরত মোহাম্মদ
(সা.) গরিব ছিলেন ৷ তিনি অনাহারে-অর্ধাহারে কালাতিপাত করতেন ৷ তাঁর পরিধানের
বস্ত্র ছিল জীর্ণ-মলিন, সত্তর তালিওয়ালা ৷ তিনি ইহুদীর বাগানে খেজুরের বিনিময়ে
কূপ থেকে বালতি দিয়ে পানি উত্তোলন করে বাগানে দিতেন ৷’
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান এ ভুল সংশোধন করে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রমাণ করেছেন-বিশ্বনবী
হযরত মোহাম্মদ (সা.) গরিব ছিলেন না; তিনি ছিলেন-ধনী, দোজাহানের বাদশাহ ৷
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত
মোহাম্মদ (সা.)-এর দাদা হযরত আবদুল মুত্তালিব (আঃ) ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা I ফলে
তিনি শৈশবকালেই রাজপরিবারে লালিত-পালিত হন ৷ তাঁর সম্মানিত পিতা হযরত আবদুল্লাহ
(আ.) ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ৷ পাশাপাশি হযরত রাসূল (সা.) নিজেও ছিলেন
মদীনায় শাসনকর্তা, অর্থাৎ মদীনায় ইসলামী জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রথম
রাষ্ট্রপতি I ‘মদীনার সনদ’ নামে তিনিই এ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করে সকলের
জীবনে ইনসাফ কায়েম করে শাস্তির সমাজ কায়েম করেন ৷
হযরত রাসুল (সা.)-এর লঙ্গরখানায় প্রতিদিন
সারে তিনশ’ থেকে চারশ’ লোক আহার করতো I সুতরাং তিনি ধনী ছিলেন তাছাড়া মহান
আল্লাহ্ কুল-কায়েনাতের রহমত হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নজিরবিহীন সম্মান ও অতুলনীয়
ধনসম্পদ দ্বারা তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেন ৷
মহান আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ - “হে রাসূল (সা.)! আমি
আপনাকে অসহায় অবস্থায় পেয়েছি, অতঃপর আপনাকে সম্পদশালী করেছি I” (সূরা-আদ্ব
দ্বুহা-৯৩: আয়াত-৮) । সুতরাং মহিমান্বিত আল্লাহ্ নিজে যে রাসূল (সা.)-কে
সম্পদশালী করলেন, তিনি কি করে গরিব হতে পারেন?
উপরন্তু পরম করুণাময় আল্লাহ্ হযরত রাসূল (সা.)-কে
এত বেশি সম্পদশালী করেন যে, তিনি তাঁর ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ তাঁর এ শ্রেষ্ঠ মাহবুবের
হস্ত মোবারকে অর্পণ করেন I এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাসূল (সা.) এরশাদ করেন- অর্থাৎ -
“একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম I আমাকে দেখানো হলো যে, পৃথিবীর সকল ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ
আমার হাতে অর্পণ করা হয়েছে ৷” (বোখারী ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ,
পৃষ্ঠা-৫১২) । ফলে আল্লাহ রাসূল (সা. ) এত বেশি দান-'সদকা করতেন যে, তাঁর মত এত
বড় দানশীল আর কেউ ছিলো না I প্রকৃতপক্ষে হযরত রাসূল (সা.) ইহকাল ও পরকালের বাদশাহ
I আর তিনি সম্পদশালী-ধনী ছিলেন বলেই তিনি যাকাত দিয়েছেন, হজ্জ করেছেন, বিদায়
হজ্জে একশ’ উট কোরবানি করেছেন I
অথচ স্বধর্মীদের অজ্ঞতার সুযোগে বিধর্মীরা
চক্রান্ত করে মুসলমানদের পাঠ্যপুস্তকে প্রর্যন্ত কুরআনবিরোধী এ মিথ্যা অন্তর্ভূক্ত
করে দেয়, হযরত রাসূল (সাঃ) গরিব ছিলেন৷
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান এ বিষয়ে একখানা কিতাব রচিত করেছেন- ‘বিশ্বনবীর স্বরূপ উদঘাটনে সূফী
সম্রাট : রাসূল (সা.) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?’ এ নামে প্রণীত কিতাবখানা সূফী
সম্রাটের ধর্মীয় সংস্কারের এক জীবন্ত দলিল হিসেবে আজ মুসলিম উম্মাহর নিকট সমাদৃত
হয়েছে ।
৩ I রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত রাসুল (সা. )
প্রবর্তিত ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হচ্ছে- এলমে তাসাউফ, আল্লাহ্কে জানার বিজ্ঞান, যার
মাধ্যমে তিনি বর্বর আরব জাতিকে আদর্শ চরিত্রবানে পরিণত করে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট
জাতির মর্যাদার উন্নীত করেছিলেন I
অপরদিকে মুসলিম সমাজে প্রচলিত ধারণা ছিলো, এলমে
তাসাউফের সাধনা করে সূফী হবার উদ্দেশ্যে মানুষকে সংসারত্যাগী হতে হবে ৷ সে ভ্রান্ত
ধারণার ফলে সমাজ থেকে এলমে তাসাউফের চর্চা বিলুপ্ত হবার উপক্রম হয়েছিল ৷
আমাদের প্রচলিত ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থায়
এলমে তাসাউফের উপর জ্ঞানার্জনের কোন ব্যবস্থাই ছিল না।
হযরত রাসূল (সা.) মানুষকে সমাজ ও পরিবারে বসবাসরত
অবস্থাতে সাধনার মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জন করে মু’মিনে পরিণত হবার শিক্ষা
দিয়েছেন I
এ সত্যকে আলোকপাত করে সূফী সম্রাট হযরত
দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান এলমে তাসাউফ ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত
করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রস্তাব দেন এবং তাঁর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা উপলব্ধি
করে ১৯৯৬ সালে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম
শিক্ষায় তাসাউফ অন্তর্ভূক্ত করা হয় I এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে অনেক বেসরকারী
বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বি.এ (অনার্স) এবং এম.এ তে তাসাউফ
অন্তর্ভুক্ত করা হয় I
৪। পবিত্র কুরআনে বহুবার বর্ণিত হয়েছে-“আসমান ও
জমিনের মালিক একমাত্র আল্লাহ ৷” অথচ বৃটিশ আমল থেকে প্রচলিত জমি রেজিস্ট্রিশনের
পদ্ধতি অনুসারে আমাদের দেশে জমি রেজিষ্ট্রেশনের সময় দলিলে লিখা হতো- ‘কষ্য কাবলা
পত্রমিদং কার্যাংচাগে-‘আমি এ জমির মালিক I আমার মালিকানা স্বত্ব অমুকের কাছে
বিক্রি করলাম’ ৷
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান দেখলেন- ‘নিজেকে জমির মালিক দাবি করা চরম গর্হিত ও শিরক; যেটি করা কোন
মানুষের উচিত নয়I’ তাই তিনি শিরকের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার লক্ষে এবং এ
ভুল প্রথা পরিবর্তন করার জন্য ইসলামী রীতিতে দলিল লিখন পদ্ধতি বাংলাদেশ সরকারের
নিকট উপস্থাপন করেছিলেন এভাবে-“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম I পরম করুণাময়
আল্লাহ্ তায়ালা আসমান ও জমিনের প্রকৃত মালিক I তাঁর বান্দা হিসেবে আমার জমির
দখলিস্বত্ব অমুকের নিকট বিক্রি করলাম I”
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯১ সালে সমগ্র বাংলাদেশে সূফী
সম্রাটের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রিশন প্রচলন করেন।
৫ I হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.)
ফরমান “দ্বীন জয়ী থাকবে ততদিন, যতদিন লোক শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করবে, কেননা ইহুদী ও
খ্রিষ্টানরা ইফতার করে দেরীতে I” (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরীফ) অথচ আমাদের দেশে
ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত সেহরী ও ইফতারের সময়সূচীতে
সূর্যাস্তের চৌদ্দ থেকে আঠারো মিনিট পর ইফতারের সময় নির্ধারণ করা হতো I
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)
হুজুর কেবলাজান হাদীস অবমাননাকর এ সময়সূচী পরিবর্তনের জন্য সরকারের কাছে যে
প্রস্তাব উত্থাপন করেন, সে অনুযায়ী ১৯৯৩ সাল থেকে রাষ্ট্রিয়ভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক
সেহরী ও ইফতাবের সময়সূচী নির্ধারণ হয়ে আসছে।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান এই সংস্কারের ফলে এদেশের মুসলমানরা সঠিক সময়ে ইফতার করার সুযোগ লাভ
করছেন।
৬ I বৃটিশ শাসনামলে প্রবর্তিত রবিবার সাপ্তাহিক
ছুটির রেওয়াজ স্বাধীনতা পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশেও পালন করা হতো I যার ফলে
এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানগণ শুত্রুবারের জুমার নামাজ ঠিকমত আদায় করতে পারতেন
না l
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান কর্তৃক রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করার আবেদন
১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকার গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে রবিবাবের পরিবর্তে
শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হয় ।
৭ ৷ মানবজাতির সর্বোত্তম জীবন-বিধান আল কুরআন গবেষণার
মাধ্যমে যুগের ইমাম সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান প্রমাণ করেছেন
এর আয়াত সংখ্যা ৬,৬৬৬ (ছয় হাজার ছয়শ’ ছেষট্টি) নয় বরং ৬,২৩৬ (ছয় হাজার দুইশ’
ছত্রিশ) খানা ৷
তাঁর এ অভিমত সরকার কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ইসলামিক
ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত কুরআন শরীফের সূচীতে
পূর্ববর্তী ভুল সংশোধন করে সর্বমেটি ৬,২৩৬ (ছয় হাজার দুই শ’ছত্রিশ) খানা আয়াত
সংখ্যা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে I
৮ I বিধর্মীরা মুসলমানদের দু’টি পবিত্র স্থান
মক্কা ও মদীনা শরীফ অবমাননা করার অসৎ উদ্দেশ্যে চক্রান্ত করে, কাবা ও হযরত রাসুল
(সা.)-এর রওজা শরীফের ছবি সংবলিত জায়নামাজ তৈরি করে আর ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ
সরল বিশ্বাসে এরূপ জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন ৷ অথচ এ দু’স্থানের ছবি
পায়ের নিচে রেখে নামাজ পড়া চরম বেয়াদবি ৷
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান
এরকম জায়নামাজ ব্যবহারের কুফল প্রসঙ্গে সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে,
ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ তাঁর সাথে একমত পোষণ করেন I পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে
মক্কা ও মদিনা শরীফের ছবি সম্বলিত জায়নামাজে নামাজ আদায় না করার পরামর্শ দেওয়া
হয়।
৯। পবিত্র কুরআনে এরশাদ এরশাদ হয়েছে "হে
রাসূল সো.) ! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ
জগতসমূহের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহর জন্য I”(সূরা-আল আন‘আম-৬ : আয়াত-১৬২) কিন্তু
আমাদের দেশে নিজের নামে, পিতার নামে, এমনিভাবে সাত নামে কোরবানি দেওয়ার রেওয়াজ
ছিলো । সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান এ ভ্রান্ত ধারণাটি সংশোধন
করে বললেন, ‘কোরবানী বান্দার নামে নয়, বরং বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে
দিতে হয়।’ কেননা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) কোররবানি দেওয়ার
সময় এভাবে নিয়ত করতেন- “হে আল্লাহ্ আপনি আমার পক্ষ থেকে, আমার পরিবার-পরিজনের
পক্ষ থেকে, এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানি কবুল করুন ।”
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের
আহ্বানে আপামর মুসলমানগণ পবিত্র কুরআন ও হাদীসের শিক্ষানুসারে –’বান্দার নামে নয়,
বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি’ করার রেওয়াজ প্রচলন করার মাধ্যমে
নিজেদেরকে শিরক করা থেকে বিরত রাখার সুযোগ পেয়েছেন ।
১০। পূর্বে আমাদের ধারণা ছিলো পবিত্র আশুরা
শুধুমাত্র শিয়া সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেছেন- পবিত্র আশুরা দিবসে
আল্লাহ্ তায়ালা আরশে সমাসীন হয়েছিলেন, যে কারণে তাঁর অভিষেক উদযাপন উপলক্ষ্যে
এদিনে অপরিসীম রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয় । ফলশ্রুতিতে, এদিন পৃথিবীতে দু’হাজার নবী
ও রাসুলের শুভ জন্ম সহ বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ৷ উপরন্তু অসংখ্য নবী ও
রাসূল আশুরার বরকতে কঠিন কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন ।
সূফী সম্রাটের উপস্থাপিত আশুরা দিবসের তাৎপর্য
তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারকে এই দিনটি গুরুত্ব সহকারে পালনের প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সরকার তাঁর প্রস্তাবটি বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে আশুরা আল্লাহর অতিষেকের
দিনটি সরকারিভাবে বিশেষ গুরুত্বসহকারে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করেন।
১১। মুসলিম জাতি যেন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)
পালন করে আল্লাহর রহমত লাভ করতে না পারে সেজন্য বিধর্মীরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে প্রচার
করেছে যে, বিশ্বনবী হযরত রাসূল (সঃ) ১২ই রবিউল আউয়াল জন্ম ও ওফাৎ লাভ করেছেন। অথচ
পবিত্র কুরআনের তাফসীর, হাদীস ও ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করে সূফী সম্রাট
দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান প্রমাণ করেছেন, হযরত রাসূল (সঃ) বিদায় হজ্বের পর
৮১তম দিবসে অর্থাৎ একাদশ হিজরীর ১লা রবিউল আউয়াল, সোমবার ওফাৎ লাভ করেছেন। তাঁর
ওয়াতের পাঁচ দিন পূর্বে সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি জীবনের শেষবারের মতো সুস্থ হয়ে
উঠেছিলেন, যা আজো বিভিন্ন দেশে ‘আখেরী চাহার শোম্বা’ হিসাবে পালিত হয়।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান
অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমাণ করেছেন ১২ই রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত রাসূল (সঃ)-এর শুভ
জন্মদিন।
১২ই রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা)-এর
শুভ জন্মদিন এবং ১লা রবিউল আউয়াল তাঁর ওফাত দিবস হওয়া সত্বেও, বাংলাদেশে ১২ই
রবিউল আউয়াল দিনটি ফাতেহায়ে দোয়াজ-দাহম ও সীরাতুন্নবী (সা.) হিসেবে সরকারিভাবে
পালিত হতো।
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)
হুজুর কেবলাজান রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর অশেষ বরকতময় শুভ
জন্মদিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর গুরুত্ব তুলে ধরে এ দিনটিকে সৃষ্টিকুলের
শ্রেষ্ঠ ঈদ ঘোষণা করেন ।
পরবর্তীতে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলজানের প্রস্তাবে
১৯৯৬সাল ১২ই রবিউল আউয়াল ফাতেহায়ে দোয়াজ-দাহম ও সীরাতুন্নবী (সা.)-এর পরিবর্তে,
পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) এর সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং দিনটি পালনে
বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয় ।বর্তমান সরকার পবিত্র ঈদে
মীলাদুন্নবী (সা.) এর এই দিনে রাষ্ট্রীয়ভাবে পতাকা উত্তোলন করতে হবে নির্দেশনা
দিয়ে ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২১ গেজেট প্রকাশ করেন।
১২। আমাদের দেশে এক শ্রেণীর মানুষ মিলাদকে বিদআত ও
হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণ করেছেন- মিলাদ শরীফ পাঠ করা বিদআত
নয়, বরং অবশ্য কর্তব্য ফরজ ।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-“নিশ্চয় আল্লাহ
স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর উপরে দরূদ পাঠ করেন, হে মু’মিনগণ ! তোমরাও তাঁর উপর
দরূদ পড় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো ।" (সূরা-আল আহযাব-৩৩: আয়াত-৫৬) একমাত্র মিলাদ মাহফিলে হযরত রাসুল (সা.)-এর শানে
দরূদ পাঠ করে সশ্রদ্ধ সালাম পেশ করা হয় ।
তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আশেকে রাসুলগণ মিলাদ
মাহফিলের আয়োজন করে হযরত রাসুল (সা.)-এর সস্তুষ্টি ও দীদার লাভে সক্ষম হয়েছেন I
এছাড়াও মিলাদের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ আল্লাহর রহমতে বিপদ-আপদ ও রোগ-ব্যাধি থেকে
উদ্ধার পাচ্ছেন I
১৩ I আমাদের সমাজে ছবি তোলা হারাম, নাজায়েজ, এরকম
কুরআন ও হাদীস-বিরোধী মতবাদ প্রচলিত ছিলো I যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী
(রহ.) হুজুর কেবলাজান সমাজের এ ভুল ধারণা সংশোধন করে বলেন-‘আল্লাহ্ তায়ালা যেহেতু
নবী ও রাসুলগণের ছবি হযরত আদম (আ.)-এর কাছে প্রেরণ করেছেন, সুতরাং ছবি তোলা হারাম
হতে পারে না ৷’ অতঃপর তিনি বিষয়টি পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অকাট্য দলিল দ্বারা
প্রমাণ করেন যে, ইসলামে ছবি তোলা জায়েজ ৷ কেননা এ বিষয়ে পরম করুণাময় আল্লাহ্
কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি I যুগের ইমামের এ বক্তব্য মুসলিম জাতিকে একটি গুরুতর
বিতর্ক মীমাংসা করতে সাহায্য করে ৷
দেখা যায়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে
ছবি সম্বলিত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে গিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার যখন বাধা হয়ে
দাঁড়ায়, তখন নির্বাচন কমিশন থেকে এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের দলিল চাওয়া হয় I
অতঃপর ‘সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান- আল্লাহ্ কোন পথে?’ নামক কিতাব নির্বাচন
কমিশন সচিবালয়ে প্রেরণ করে ছবি সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য জানিয়ে দেওয়া হয় I
সুতরাং যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের সুস্পষ্ট
এ দিকনির্দেশনায়, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছবি তোলার বৈধতা স্বীকৃতি লাভ করে,
এবং এ মর্মে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় I
২০০৭ সালের ২৫শে জুলইি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের
জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব এস.এম. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ঐ প্রজ্ঞাপনের তৃতীয়
ধারায় বলা হয় -"ভোটার তালিকার জন্য ছবি তুলতে ধর্মীয়ভাবে কোন বাধা-নিষেধ
নেই I”
১৪। নানা পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে মুসলমানগণের
কর্তব্য ও করণীয় বিষয়ক প্রয়োজনীয় সময়োপযোগী উপদেশ প্রদানের উদ্দেশ্যে,
শুক্রবারের জোহরের ওয়াক্তের চার রাকাত ফরজ নামাজের পরিবর্তে দু’রাকাত নামাজ ও
অবশিষ্ট দু’রাকাতের পরিবর্তে খুৎবার বিধান রয়েছে ৷ কিন্তু আমাদের দেশে খুৎবা
প্রদান আরবী ভাষায় হওয়ায়, মুসল্লিগণ খুৎবার বিষয়বস্তু বুঝতে পারেন না এবং সে
অনুযায়ী আমল করে তা থেকে উপকৃত হতে ব্যর্থ হন I
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)
হুজুর কেবলাজান সর্বপ্রথম মাতৃভাষায় খুৎবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন I
ফলশ্রুতিতে বহু মসজিদে এখন আরবী ভাষার পাশাপাশি বাংলায় খুৎবা দেওয়া চালু হয়েছে ।
১৫। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে… “তোমরা সবাই
ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরো, এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না I”
(সূরা-আলে ইমরান-৩: আয়াত-১০৩) হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-“সকল মুসলমান ভাই ভাই I”
অথচ মুসলমানগণ এক আল্লাহর বান্দা ও একই রাসুলের উম্মত হওয়া সত্বেও , বিভিন্ন দেশে
ঈদ, রোজা, কোরবানিসহ বিবিধ ইসলামী অনুষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালন করে থাকে ।
চন্দ্র গণনার হেরফেরের কারণে, প্রতি বছর
বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি-এ অজুহাতে, মক্কা শরীফের সাথে বাংলাদেশের
সময়ের ব্যবধান মাত্র তিন ঘণ্টা হওয়া সত্বেও মক্কা শরীফে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের
দীর্ঘ এক দিন অথবা দু’ দিন পর তা বাংলাদেশে পালন করা হয৷
যেহেতু সমগ্র পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটি, মুসলিম
জাতির কেন্দ্রবিন্দু মক্কা শরীফে চাঁদ দেখার সাথে সঙ্গতি রেখে সারা বিশ্বে একই
দিনে যাবতীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপন সম্ভব ।
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী
(রহ.) হুজুর কেবলাজান এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৮ সালে চন্দ্রপঞ্জিকা প্রণয়নের
একটি মডেল মুসলিম বিশ্বের সরকার প্রধানগণের কাছে উপস্থাপন করেন I প্রস্তাবটি
ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর সেমিনারে আলোচিত হলে, সদস্যভুক্ত পঞ্চাশটি দেশের
প্রতিনিধিগণ এর ভূয়সী প্রশংসা করেন । অতঃপর ওআইসি তার সদস্যভুক্ত দেশসমূহকে সারা
বিশ্বে একই দিনে ঈদ করার প্রস্তাবনা দিয়ে চিঠি প্রেরণ করে I বর্তমানে এ
প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ বিবেচনাধীন রয়েছে I
১৬। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজানের অন্যতম সংস্কার হযরত রাসূল (সা.) হেরাগুহায় আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি
যে ইসলাম পেয়েছিলেন, সেটিই ছিলো মোহাম্মদী ইসলাম। কারণ যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ এক
ও অদ্বিতীয় আল্লাহর পবিত্র বাণীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে স্বজাতির কাছে যুগোপযোগী যে
ধর্মীয় বিধান পেশ করেছেন, তা তৎকালীন নবী ও রাসুলের নামানুসারে অর্থাৎ ইব্রাহীমী
ইসলাম, মুসায়ী ইসলাম এবং ঈসায়ী ইসলাম নামে পরিচিতি লাভ করে I
একইভাবে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর
প্রবর্তিত পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধানের নাম হচ্ছে মোহাম্মদী ইসলাম, যেটির সাথে
পূর্ববর্তী ইসলামী বিধানের কিছু মিল রয়েছে I যেহেতু আমরা হযরত রাসূল (সা.)-এর
শিক্ষা অনুসরণ করি, সেহেতু আমাদের ধর্মের নাম হওয়া উচিত মোহাম্মদী ইসলাম ।
এ প্রসঙ্গে যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত
দেওয়ানবাগী (রহ) হুজুর কেবলাজান বলেছেন “ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলমানগণ ‘উম্মতে
মোহাম্মদী’ এবং মুসলমানদের জীবন-বিধান ‘মোহামেডান ল’ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলো
I পরবর্তীতে উমাইয়া শাসনামলে চক্রান্তের মাধ্যমে ইসলাম থেকে হযরত মোহাম্মদ
(স.)-এর নাম মোবারক বাদ দিয়ে ‘কাণ্ডারিবিহীন ইসলামে’ পরিণত করা হয়েছে ৷”
তিনি আরো বলেছেন-“মাজহাবের ইমামগণের নামানুসারে
যদি হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মাজহাব হতে পারে, তরীকার ইমামগণের
নামানুসারে যদি কাদেরীয়া, চিশতীয়া, নক্শবন্দীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া তরীকা হতে
পারে, এমনকি হাদীস সংকলকদের নামানুসারে যদি বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী
শরীফ, প্রভৃতি কিতাবের নাম হতে পারে, তবে যিনি আপন সর্বস্ব ত্যাগ করে আমাদের জন্য
পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে গেছেন, তাঁর নামানুসারে এ ইসলামের
নাম ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ না হওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়?”
যুগের ইমামের এ শিক্ষা অনুসরণ করে অসংখ্য মানুষ
মোহাম্মদী ইসলামের শান্তি বাস্তব জীবনে উপলব্ধি করার সৌভাগ্য অর্জন করছেনI
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজান তাঁর সূদীর্ঘ জীবনে অসংখ্য গবেষণামূলক গ্রন্থসমূহ রচনা করেছেন। তাঁর
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ-
১)
স্রষ্টার স্বরূপ উদঘাটনে সূফী সম্রাট: আল্লাহ্কে সত্যিই কি দেখা যায় না? (বাংলা),
Sufi Samrat Uncovers Actual Identity of Allah: Is Allah Not Really Seen?
(ইংরেজি অনুবাদ),
২)
বিশ্বনবীর স্বরূপ উদঘাটনে সূফী সম্রাট: রাসূল (সঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন (বাংলা),
Sufi Samrat Uncovers Hidden Truth on Great Prophet: Was Muhammad (Sm) Really
Poor? (ইংরেজি অনুবাদ),
৩)ইমাম
সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) [জীবনীগ্রস্থ],
8)এজিদের
চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম,
৫)
সৃফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার-১ম ও ২য় খণ্ড,
৬) সূফী
সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান:আল্লাহ্ কোন পথে ?,
৭)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ পথ,
৮)
মুক্তি কোন পথে ?,
৯ ) শান্তি কোন পথে ?,
১০) ঈদ সমস্যার সমাধান (বাংলা), Eid Moon Sighting
Problem and Solution (ইংরেজি),
১১) ফেরকা সমস্যার সমাধান,
১২)
সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার,
১৩)
কবর ও মাজার সম্পর্কে ইসলামের বিধান ও
১8) মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা (দৈনিক আমল) I
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজানের সুদীর্ঘ তেত্রিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ও অনবদ্য অবদান মহান
রাববুল আলামীনের জাত-পাকের পরিচয় এবং তাঁর গুণের পরিচয় তুলে ধরে ‘তাফসীরে সূফী
সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক ৮টি খন্ডে তাফসীর প্রণয়ন করেছেন।
এছাড়াও বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে
দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ৷ পত্রিকাসমূহ হলো- মাসিক আত্মার
বাণী (প্রথম প্রকাশ ১৯৮১ সাল), ইংরেজি সাপ্তাহিক 'The Weekly Chandrapara (১৯৮৩
সাল), সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ (১৯৮৯ সাল), দৈনিক ইনসানিয়াত (১৯৯১ সাল), ইংরেজি
সাপ্তাহিক Weekly The Message (১৯৯২ সাল) ।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজানের সংসারিক জীবনে তিনি ছিলেন চার ছেলে সন্তান এবং তিন কন্যা সন্তানের জনক।
তাঁর প্রতিটি সন্তানই অলী-আল্লাহ। তাঁর স্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ
চন্দ্রপুরী (রহ.) এবং হযরত বড় মা সৈয়দা ছমিরুনন্নেছা খানম (রহ.)-এর চতুর্থ কন্যা
ছিলেন আওলাদে রাসূল (সঃ), কুতুবুল আকতাব, দুররে মাকনুন, খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা
হামিদা-এ-খোদা (রহ.)।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর
কেবলাজানের প্রতিটি সন্তানই ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত এবং
পিএইচডি ডিগ্রীধারী। এবং সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহঃ অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত
আছেন। এটা সারা বিশ্বে বিরল ঘটনা। এছাড়াও ২রা এপ্রিল, শনিবার, ২০১৬ সালে,
বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
(পিইউবি)-এর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের
পুনজীবিনদানকারী, যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)
হুজুর কেবলাজান এবং তার সহধর্মিণী আওলাদে রাসূল, কুতুবুল আকতার, দূররে মাকনূন,
খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর নামে গোল্ড মেডেল প্রবর্তন করা
হয়েছেI
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি মহৎ দায়িত্ববোধ
দ্বারা পরিচালিত হয়ে, উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীসহ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ডীন ও পরীক্ষা
নিয়স্ত্রকের উপস্থিতিতে, গোল্ড মেডেল প্রবর্তনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন
করেন । এর ফলে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূফী সম্রাটের জীবন দর্শনের উপর
একটি সেমিনার আয়োজন করে বিশ্বনবী হযরত রাসূল (সা.)-এর রেখে যাওয়া শাস্তির ধর্ম
মোহাম্মদী ইসলামের সুমহান আদর্শ উপস্থাপনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ যেমন গ্রহণ
করেছেন, তেমনি সর্বোচ্চ মেধাবীকে এ গোল্ড মেডেল প্রদানের মাধ্যমে আদর্শ শিক্ষা
ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করেছেন। আর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এ পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে যুগের ইমামের সুমহান আদর্শের
সুস্পষ্ট বিজয়ের ঘোষণা দেয় I
দেওয়ানবাগ শরীফের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী বীর
মুক্তিযোদ্ধা সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) ২৮ ডিসেম্বর,
২০২০ সাল, সোমবার সকাল ৬টা ৪৮ মিনিটে ওফাত লাভ করেন। ২৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার জানাজা
শেষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। এরপর রাজধানীর
কমলাপুরে অবস্থিত বাবে মদিনা, দেওয়ানবাগ শরীফে তাঁকে রওজাস্থ করা হয়।
0 Comments